ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শেখ হাসিনা ফিরলেন, প্রাণ পেল বাংলাদেশ

​​​​​​​মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৭ মে ২০২৪

শেখ হাসিনা ফিরলেন, প্রাণ পেল বাংলাদেশ

.

(গতকালের পর)

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে বিচার, বঙ্গবন্ধুকে স্বমহিমায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আসীন, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়, বিনা জামানতে ভূমিহীন কৃষক বর্গাচাষিসহ কৃষকদের পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে চলমান রক্তপাত বন্ধের উদ্যোগ, ৬৫ হাজার চাকমা শরণার্থীর পুনর্বাসন, চার স্তরবিশিষ্ট শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইন প্রণয়ন, সংবাদপত্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনের দক্ষতা, জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিশন গঠন, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রগতিশীল নারী উন্নয়ন নীতিমালা, পিতার নামের সঙ্গে মায়ের নাম উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা, স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন প্রথা চালু, হাইকোর্টের বিচারপতি এবং সচিব, যুগ্ম সচিব, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারসহ সরকারি উচ্চপদে মহিলাদের নিয়োগ, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীতে মেয়েদের নিয়োগ, নারী শিক্ষার প্রসার, প্রতিরক্ষা বাহিনীর যুদ্ধোপকরণ সাজ-সরঞ্জাম বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন এবং ১৯৯৯-এর ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত বাংলাভাষীর প্রাণের চাওয়া বাংলাকে জাতিসংঘ কর্তৃকআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেরস্বীকৃতি আদায় করে আনাÑ এগুলোর সবই হয়েছে মাত্র বছরের শাসনামলে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদ লাভ করার বিরল গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ এই আমলে, ১৯৯৮ সালে। গঠিত হয় এশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর পিস। উদ্যোগী হয় বিমসটেক ডি- গ্রুপ গঠনের।

আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে উন্মোচিত হয় সহযোগিতার নতুন সব দ্বার। দেশে ১২টি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সাক্ষরতার হার উন্নীত হয় ৪৪ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের গড় আয়ু ৫৮. থেকে বেড়ে ৬৩ বছর হয় ২০০০ সালে। বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, আশ্রয়ণ, গৃহায়ন, আবাসন, ঘরে ফেরা কর্মসূচি, একটি বাড়ি একটি খামার, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ, আদর্শ গ্রাম কর্মসূচি প্রভৃতি ছাড়াও দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকহারে ভিজিএফ কার্ড, কাজের বিনিময়ে কর্মসূচি, জিআর, টিআর প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ফলে, মানব দারিদ্র্য সূচক ৪২ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে নেমে আসে। পক্ষান্তরে মানব উন্নয়ন সূচক ৪২. শতাংশ থেকে ৪৮. শতাংশে উন্নীত হয়। পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে রূপ নেয়; যা ছিল সে সময়কার বিস্ময়কর সাফল্য। যোগাযোগ ক্ষেত্রেও অর্জিত হয় বিপুল সাফল্য। বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন সংযোগ বসে; পদ্মা (পাকশী), মেঘনা (ভৈরব), রূপসা (খুলনা)সহ দেশের বড় বড় নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ  শুরু হয়। ১৫,১২৮ কিলোমিটার নতুন পাকা সড়ক, ৩৬ হাজার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ১৯ হাজার ছোটবড় ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সাফল্যের অংশ হিসেবে লাখ টাকার মোবাইল - হাজারে টাকায় নেমে আসে এবং মোবাইল ফোনের সংখ্যা ২০০০ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে লক্ষ্যে উন্নীত হয়; ল্যান্ড ফোনের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ,৬৬,৯২০টিতে। আইটি সেক্টরের অপরিসীম গুরুত্ব সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে কম্পিউটার সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয় এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ হয়।

সরকারি দপ্তরের কর্মকা-কে কম্পিউটারাইজড করার প্রকল্প নেন। ছোট-বড় এক লক্ষাধিক নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও অর্জিত হয় অসামান্য সাফল্য। টেস্ট মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আমাদের বুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো বাংলাদেশকে কী বাংলাদেশ বানিয়েছেন? যে বাংলাদেশে নব্বই-বিরানব্বই-চুরানব্বই সালেও হাজার হাজার মানুষের জন্য একজন সাধারণ ডাক্তার মিলত না। ভাত তো দূরের কথা, অনেক এলাকায় ভাতের মাড় পাওয়ায় ছিল যেন বিলাসিতা! প্রসঙ্গে একটা উদ্ধৃত টানা যাক। ১৯৯৪ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নবাসীদের জীবনদুর্দশা নিয়েলক্ষ্মীটারীনামেই বই লিখেছিলেন সাংবাদিক-লেখক মোনাজাতউদ্দিন। সেখানেই উল্লেখ, লক্ষ্মীটারীর মানুষ, হিন্দু কি মুসলমান, ভাতকে বলত মা-লক্ষ্মী। আঞ্চলিক ভাষার যার উচ্চারণমাঁও নক্কি থালা থেকে দুয়েকটা উপচে মাটিতে পড়লে তৎক্ষণাৎ খুঁটে তুলে খাওয়াই ছিল সেখানকার রীতি। কয়েক দানা ভাত থালায় রেখে আসন ছেড়ে ওঠা তো দারুণ এক অন্যায়। যদিও এত কিছুর পরেও লক্ষ্মী থাকত তাদের থেকে অনেক দূরে!

১৯৯৪-তে লক্ষ্মীটারীতে হাতে গোনা সাধ্যবান কয়েকটি পরিবার ছাড়া ঘরে ঘরে ভাতের টান। আকালের দিনগুলোতে এমনও হয় যে, মজুর পরিবারের সদস্যরা দশ-বারোদিন অন্তর একবেলা দেখে ভাতের মুখ। এদেরই একজন মোনা মিয়া। কৃষিকাজ করত। পরে জমি বেচে নিজের জমিতেই মজুর হয়েছিল। তাকে উদ্ধৃত করেই মোনাজাতউদ্দিন লিখেছিলেন, ‘আটাশির মঙ্গায় তারা সপরিবারে গাছ আলু সেদ্ধ খেয়েছিল একটানা চারবেলা। তারপর একবেলা দুমুঠো ভাত মিলেছিল। আবারো গাছ আলু সেদ্ধ। সে সময় মোনা মিয়ার দুটি মেয়েই ডায়রিয়ায় মারা যায়। মৃত্যুর আগে তার মেয়ে দুটি, টেপি আর বুড়ি স্যালাইন নয়, একটুখানি ভাত খেতে চেয়েছিল। ঘোরের ভেতরভাত ভাতবলে কোঁকাচ্ছিল বড় মেয়েটি। সে সময় আশপাশের সব বাড়িতে জানান দিয়েছে মোনা মিয়া, কয়েক মুঠো ভাত যদি মেলে। পায়নি।

দশ-দশটি বাড়িতে ছোটাছুটির পর মিলেছিল পোয়াখানেক খুদ, তা- খুব পুরনো, দুর্গন্ধযুক্ত।.. না, অনাহারে নয়, আহার করেই মারা গিয়েছিল কিশোরী টেপি আর বুড়ি। কিন্তু ভাত তারা পায়নি, পায়নি স্যালাইন ওষুধ। নষ্ট হয়ে যাওয়া খুদ তাদের অপুষ্টি-আক্রান্ত পেটে সয়নি।আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সয়নি মানুষের এমন অসহায়ত্ব। যে কারণে বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেই মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দেশকে প্রথমবারের মতো খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল এবং উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত করেন। যে বিরল সাফল্যের জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ঋঅঙ তাকে সেরেস পদকে ভূষিত করে। ক্ষমতার মাত্র বছরে দারিদ্র্যবিমোচন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করে পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে আমূল পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করায় আজও সেই শাসনকাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী-অর্থনীতিবিদদের কাছে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের শ্রেষ্ঠকাল হিসেবে স্বীকৃত।

১৯৮১ সালে দেশে এসে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা আগামী দিনে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করবে। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি, শোষণের মুক্তি।...আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই।বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর কথা রেখেছেন, বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথম মেয়াদের (১৯৯৬-২০০০) উপরোক্ত উন্নয়নচিত্র এটাই বলে দিচ্ছে, তাঁর সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালির অবর্ণনীয় আর্তনাদ নীরব অশ্রু মুছে দিতে কতটা অপরিহার্য ছিল।

তিন

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের শিখরে উড্ডীন। পৃথিবীর কাছেও অনন্য এক উদাহরণ। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন গোটা বিশ্বে আমাদের ভিন্ন স্বতন্ত্র পরিচয় এনে দিয়েছে; আর উপমহাদেশে বানিয়েছেএশিয়ার টাইগারনাম্বার ওয়ান উন্নয়নমুখী দেশবলেছেন বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে গড় নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই রূপকল্প ২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। চলছে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ; যার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সাফল্যের পর ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ পরিবেশ সুরক্ষা এবং মহানগর উন্নয়নে বিশেষ করে যানজট নিরসনে রেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আজ অনন্য উন্নয়নের নিদর্শন। 

তবে যে বিষয়টি এড়িয়ে গেলে চলবে না, তা হলোÑ এমন অসংখ্য-অগণিত উন্নয়নের মাঝে গোটা একটি জাতির জীবনই যে বদলে গেল, তারও মূল্যায়ন করতে হবে। শুধু দৃশ্যমান কিংবা বস্তুগত উন্নয়ন নয়, জীবনমানের উন্নয়ন বিষয়টাও আলোচনার বিষয়ে পরিণত করতে হবে। নিজেকে, নিজ পরিবারকে এমনকি নিজের সামাজিক অবস্থানকে ১৫ বছর আগে এবং বর্তমানের সঙ্গে তুলনা করলেই অনেকটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার কেবলই সামষ্টিক উন্নয়নে সীমাবদ্ধ ছিল না, ব্যক্তিগতভাবেও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে এসেছে সব সময়; এর উৎকৃষ্ট উদাহরণস্মার্ট বাংলাদেশতত্ত্ব। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে ঘোষণা ২০০৮ সালে দেওয়া হয়েছিল, তা ২০২১ সালে সফল কার্যকারিতার পর এখন চলছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ। ২০৪১ সালকে টার্গেট ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ-এর ৪টি মূল ভিত্তিও নির্ধারণ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এগুলো হলো : স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। এর মধ্যে স্মার্ট সিটিজেনের মূল সারমর্ম হলো- দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন এবং তাদের জন্য একটি ইউনিক ডিজিটাল আইডি থাকবে। যা দিয়ে তারা যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, স্মার্ট ইকোনমি তৈরির জন্য অর্থনীতির সব কার্যক্রম হবে প্রযুক্তিনির্ভর। পাশাপাশি কমপক্ষে ৬০% অর্থনৈতিক স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেইসঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে লাখ স্টার্টআপ তৈরির মাধ্যমে একটি স্মার্ট ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে। পরিকল্পনায় রয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের আইসিটি শিল্প এবং একটি শক্তিশালী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ারও। তৃতীয়ত, স্মার্ট গভর্নমেন্টের মাধ্যমে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সকল সরকারি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা হবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, জননিরাপত্তার মতো প্রশাসনব্যবস্থাও হবে প্রযুক্তিনির্ভির। শতভাগ সরকারি কার্য সম্পাদিত হবে কাগজবিহীনভাবে। সবশেষে গড়ে তোলা হবে একটি স্মার্ট সোসাইটি। যেখানে সকলের জন্য উন্নত সমৃদ্ধ জীবনমান নিশ্চিত করা হবে। গড়ে তোলা হবে একটি টেকসই স্মার্ট পরিবেশ। সোলার এনার্জি, গ্রিন এনার্জির মতো উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্লিন পরিবেশবান্ধব নিউক্লিয়ার এনার্জির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রযুক্তিগত শিল্প অবকাঠামোগত বিকেন্দ্রীকরণের জন্য সারাদেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনকিউবেশন সেন্টার, প্রতিটি বৃহত্তর জেলাসমূহে কমপক্ষে একটি করে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বিভাগীয় জেলাসমূহে কমপক্ষে একটি করে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হবে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে এসব স্থাপনার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল ভিলেজ হাব ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসমূহে কমপক্ষে একটি করে শেয়ারেবল ওয়্যারহাউস সৃষ্টি করা হবে। এভাবেই ২০৪১ সালের আগে গড়ে উঠবে উন্নত-সমৃদ্ধ-অত্যাধুনিক বাংলাদেশ।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতের পর অনেক সরকার এসেছে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কখনো ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। শাসকরা ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন প্রথমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এবং দেশের জনগণকে ক্ষমতার দুর্গ থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখার কাজে। বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার দেশে ফেরা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর মানুষ সেই স্বাদ পেয়েছে। যার প্রথম শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন এবং তাতে শেখ হাসিনা তাঁর দলের নেতৃত্বে জনগণের বলিষ্ঠ জয়ের মধ্য দিয়ে।

শেষ করব, তার আগে আরেকবার প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করতে চাই।শেখ মুজিব আমার পিতাবইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লাখো মানুষের স্নেহ আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। কিন্তু যাঁদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ ছাড়ার সময়, আমার সেই অতি পরিচিত মুখগুলো আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল।’ 

প্রধানমন্ত্রী, আপনি আর আজ একা নন, বছরের নির্বাসন-জীবন শেষে গত ৪৪ বছর ধরে আপনি যেভাবে দায়িত্বে-কর্মে, সুখে-দুঃখে, স্নেহে-মমতায়, শাসনে-আদরে-সেবায়-যত্নে একটি জাতিকে আগলে রেখেছেন, রাখছেন; তাতে আপনিই এই জাতির সর্বমঙ্গলা। চির জাগরূক থাকুক আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি, উদার মানবিক মূল্যবোধ, স্বদেশানুরাগ বিশ্বজনীনতা। সুস্থতা কামনা করছি।  (সমাপ্ত)

লেখক : মহামান্য রাষ্ট্রপতি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

×