ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সিডনির মেলব্যাগ

প্রবাসী জনগোষ্ঠী

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২১ নভেম্বর ২০২৩

প্রবাসী জনগোষ্ঠী

সিডনির মেলব্যাগ

বাংলাদেশ ও প্রবাসী মানুষের মনোজগৎ একসূত্রে বাঁধা। সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। শুধু কে কিভাবে কোন্ দৃষ্টিকোণে দেখে সেটাই তফাত। এই জায়গাটি আমাদের সবার মনে রাখা উচিত। দরকার পরিচর্যা। মন ও মানসিকতার। গণতান্ত্রিক দেশ ও সমাজে বসবাস করার পরও আমাদের মানসিকতা থেকে অন্ধত্ব আর একগুঁয়েমী যায়নি। বরং নানা কাজকর্মে তার বহির্প্রকাশ বিস্মিত করে। মনে হয় এই কি আমাদের চাওয়া

প্রবাসী বাংলাদেশীদের চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়। তারা নির্ভয়ে নিরাপদে দেশে যাওয়া, ফিরে আসা আর শান্তি চায়। আজকের বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে চরম উন্নতি তাতে তাদের কষ্ট না হওয়ারই কথা। বড় বড় শহর এমনকি মফস্বলেও যাতায়াত এখন সহজ হয়ে গেছে। সরকারের আন্তরিক চেষ্টায় সম্ভব হয়েছে অনেকটাই। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভোগ আর অরাজকতা আমাদের পিছু ছাড়েনি। দুর্ভাগ্য যে, আমরাই আমাদের শত্রু।
চাইলেই বাংলাদেশের বাইরে আমরা একটা বিশাল শক্তির বলয় গড়ে তুলতে পারতাম। যা উপমহাদেশের কয়েকটি দেশ পেরেছে। ভারতের কথাই বলি। তারা দেশ নিয়ে বাইরে কোনো তর্ক-বিতর্ক করে না। দেশ ও দেশের ভাবমূর্তির বিষয়ে সদা সতর্ক। এ ভাবটা শ্রীলঙ্কানদেরও আছে। নানাভাবে নিজেদের বিভক্ত না রাখলে আজকে সিডনিতে আমাদের দেশ বা ঐতিহাসিক কোনো নামে একটা বড় কিছু হতে পারত।

ঐতিহাসিক ঘটনা বা কোনো নাম যেমন- বঙ্গবন্ধু এসব সামনে রেখে আমরা পেতাম প্রশান্ত পাড়ে জাতীয় পরিচয়ের গৌরবময় কিছু একটা। যা পাইনি তা পাইনি। তবে এখনো সময় আছে। কারণ, যতদিন বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশকে আমাদের জাতিকে সমানে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ততদিন এসব আশা ফলবতী হবেই। বাংলাদেশের মানুষজন বিদেশে খুব পরিশ্রমী। তাদের ভাবমূর্তিও ভালো। শুধু রাজনীতি ও বিভক্তি আমাদের আর কতকাল দ্বিধাবিভক্ত রাখবে কে জানে?
বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় সুফল আমাদের প্রোডাক্ট বা উৎপাদনের সঙ্গে বিদেশের পরিচয়। জনসংখ্যা কম হলেও মানুষের যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বেশি, এসব দেশের বাজার তাই দখল বা অধিকার নেওয়ার বিকল্প নেই। সে কাজটির শুরু কবে হয়েছে সে তর্কে না গিয়ে বলব, সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলে এই আমলেই তার বিস্তার ঘটেছে। নয়তো আমরা এতটা আসতে পারতাম না। বলছিলাম উন্নয়নের কথা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আর কৃষির উন্নতি চোখে পড়ার চেয়েও বেশি। এসব দেশের পোশাকের বাজার বলতে গেলে দেশের পোশাকে ঠাসা। এক কালে যা চিন্তা করা যেত না, সেটাই এখন বাস্তব।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা এখন দুঃসাধ্য বিষয়। সম্প্রতি কোনো বিশেষ দেশের রাষ্ট্রদূত হাজারো চেষ্টার পরও দেশ, দেশের মানুষ এবং শীর্ষ নেতার মনোবল ভাঙতে পারেননি। এককালে দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় রাখা আর এখন দেশে দেশে প্রভুত্ব কায়েম করা ভিন্ন বিষয়। ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষ সব জানছে, বুঝছে, এগোচ্ছে। তাই সে খুব ভালো করেই জানে, কে তার বন্ধু আর কে দুশমন। এটাও জানে, আগের মতো খবরদারি করা এখন অচল। বিশেষত, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল আর বিস্ময় জাগানো অর্থনীতির দেশকে এখন সমীহ করার বিকল্প নেই। তার মতো যেসব দেশ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে এগোচ্ছে, তাদের সঙ্গে আর খবরদারির চোখ রাঙানো চলে না। কারণ, দুনিয়ার নিয়ামক যে অর্থনীতি তার একটা বড় দিক তাদের হাতে। আপনি যেই হন না কেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে না চললে খবর আছে।
উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি যে কোনো দেশের মানুষের স্বপ্ন। আজকে সে স্বপ্ন আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ বিজয়রথে। নিন্দুক  সমালোচকরা যে যাই বলুক, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনামূলক আলোচনা করলেই আমরা পার্থক্য ধরতে পারি। অনেকে হয়তো জানেন পাকিস্তান এখন শেষ ধাপে ধুঁকছে। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে পাকিস্তানের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে আর বেশি সময় লাগবে না।  
এখন আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি আমাদের আশা, দেশ ও সমাজ এই আনন্দ আর মূল্যায়নকে নিজেদের ভেবে কোনো অগ্রযাত্রা ব্যাহত করবে না। দুনিয়ার সব দেশই এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে ব্যস্ত। এই যে সিডনি শহরজুড়ে নেপালিদের আগমন ও কর্মমুখরতা তাকে অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের পরে এসে অভিবাসী ও ছাত্র-ছাত্রী হওয়ার সুযোগ লাভ করেও তারা দ্রুত এগোচ্ছে। রেডিও টকশোর হোস্ট বলেছেন, তার অভিজ্ঞতায় নেপালিদের কাজের আগ্রহ আর শক্তি বা ইচ্ছা নাকি উপমহাদেশের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। হয়তো তাই। বিষয়টা হচ্ছে এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের শ্রমমুখী শ্রমনিবেদিত জনগোষ্ঠীও এমন প্রশংসার দাবিদার। নানা কারণে তা আমাদের ঘরে বা কানে এসে পৌঁছাতে পারছে না।
বাংলাদেশ ও প্রবাসী মানুষের মনোজগত একসূত্রে বাঁধা। সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। শুধু কে কিভাবে কোন্ দৃষ্টিকোণে দেখে সেটাই তফাত। এই জায়গাটি আমাদের সবার মনে রাখা উচিত। দরকার পরিচর্যা। মন ও মানসিকতার। গণতান্ত্রিক দেশ ও সমাজে বসবাস করার পরও আমাদের মানসিকতা থেকে অন্ধত্ব আর একগুঁয়েমী যায়নি। বরং নানা কাজ কর্মে তার বহির্প্রকাশ বিস্মিত করে। মনে হয় এই কি আমাদের চাওয়া? আবারও বলি, দেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশীদের চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়। তাদের নিরাপত্তা আর শান্তি নিশ্চিত করলেই তারা সুখী। তারা তো এরাই, যারা রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে।
বাকিটা দেশের কর্তা ব্যক্তি ও সময়ের হাতে। কথাগুলো বললাম এই কারণে যে, প্রবাসে শিল্প সংস্কৃতি বা জীবনচর্চার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি ও বাস্তবতা চর্চার মূল একটি বিষয়। যা আমাদের মাঝে মধ্যে দুশ্চিন্তাগ্র্রস্ত করে তোলে। যার নিরসন কেবল সময় আর ভাগ্যের হাতে। তবু দেশ যত এগোবে, মানুষ যত এগোতে শিখবে, তত আমাদের দেশের ভাগ্য বদলাবে। সে বদলের কা-ারি হিসেবে গর্বিত বাংলাদেশীদের সঙ্গে অবশ্যই থাকবে প্রবাসী জনগোষ্ঠী।[email protected]

×