ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নবায়নযোগ্য জ্বালানি

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৪ অক্টোবর ২০২৩

নবায়নযোগ্য জ্বালানি

সম্পাদকীয়

দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। কৃষি নির্ভরতা থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে। শিল্প-কলকারখানার চাকা সচল রাখে বিদ্যুৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এ বলেছেন, ‘দেশের প্রত্যেক মানুষের ঘরে আমরা আলো জ্বালব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর প্রায় ৫৫ শতাংশ নির্ভরশীল। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ১০ শতাংশ এবং তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশের জলবায়ু রক্ষার্থে ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্যতম ভরসা বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গএনইএফ। সংস্থাটি বলছে, দেশের জ্বালানি খাতে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। যা এই দশকের শেষ নাগাদ কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় হবে সস্তা। 
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা কমিয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে গ্যাসের দাম। দেশের আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাতও প্রভাবিত হয় ব্যাপকভাবে। ক্রমবর্ধমান আমদানি বিল কমানোর জন্য জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দিয়েছে ব্লুমবার্গএনইএফ। পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবশক্তি, ভূ-তাপ, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা ও হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। সারাবিশ্বে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আমাদের বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে না উচ্চমূল্যে। একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণও কমানো যাবে। চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর দেশের প্রথম পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে শুরু হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন, যা পরিবেশবান্ধব।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে এশিয়ার দেশগুলো এগিয়ে আছে। ২০২২ সালে চীন নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ১৪১ গিগাওয়াট। একই বছরে ভারত উৎপাদন করেছে ১৫ দশমিক ৭ গিগাওয়াট। এর ফলে আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে ব্যাপক। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পথে হাঁটছে। বর্তমানে দেশে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মানি ও বাংলাদেশের সৌরশক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, জার্মানির যে কোনো জায়গায় সূর্য থেকে আসা সর্বোচ্চ সৌরশক্তিও বাংলাদেশের চেয়ে কম। জার্মানি কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিয়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করছে।

বাংলাদেশ তার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশে বাতাস থেকে ১ হাজার এবং বর্জ্য থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের পরনির্ভরশীলতা দূর হয়ে যাবে। মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উন্নয়নশীল এ দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস কাজে লাগানো সময়ের দাবি। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ডিজেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। 

×