ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ক্যাপস্টোন কোর্স ॥ অনন্য অভিজ্ঞতা

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ক্যাপস্টোন কোর্স ॥ অনন্য অভিজ্ঞতা

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) তিন সপ্তাহের ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশ নেওয়া

 তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন ফোন করা হয় তখন না করে দিয়েছিলাম। বিষয় ছিল ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (্এনডিসি) তিন সপ্তাহের ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশ নেওয়া। কর্মক্ষেত্রের দৈনন্দিন ব্যস্ততায় সময় বের করা এবং নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকা ইত্যাদি কারণেই নেতিবাচক মনোভাব কাজ করেছিল। কোর্সে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করায় তারা খুব উৎসাহ দেখালেন। বললেন, খুব ভালো একটি অভিজ্ঞতা হবে। আবার মন্ত্রণালয়ে ফোন করে জানালাম, আমি রাজি। শুরু হলো প্রক্রিয়া। কোর্সে অংশ নিয়ে বুঝতে পারলাম একটি বিরাট সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছিলাম।

তিন সপ্তাহের অভিজ্ঞতা এতটাই ইতিবাচক এবং সুখকর ছিল যে, কোর্স সমাপ্তিতে মন খারাপ হয়ে গেল। সহকর্মীদের সঙ্গে প্রতিদিন আর দেখা হবে না- এটি ভেবে এক ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হতে থাকে। শুধু আমি নই, কোর্সে অংশ নেওয়া সবার মধ্যেই এমন অনুভূতি দেখতে পেয়েছি।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সবার এমন অনুভূতি? তিন সপ্তাহের এই কোর্স চলার সময় ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে এই ভালো লাগা। প্রথমত, এই কোর্সে এমন কিছু অর্জন ছিল যা আগে আমরা পাইনি। নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়েছি। রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে পেয়েছি দিক নির্দেশনা। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সম্মিলনে  তৈরি হয়েছে ভালো লাগার মেলবন্ধন। ব্যক্তি, সামাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যার ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। কোর্সের আয়োজক প্রতিষ্ঠান এমন একটি উদ্দেশ্য নিয়েই চালু করেছে এই হাই প্রোফাইল কোর্স। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে উদ্যোক্তাদের এই সাফল্য অনুধাবন করেছি। একই সঙ্গে সবাই মিলে ধন্যবাদও জানিয়েছি এনডিসিকে।
এনডিসি প্রতিষ্ঠা হয়েছে সামরিক-বেমারিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ইস্যুতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভিশন ২০৪১ অর্জনে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে নানা আঙ্গিকে। প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত তিনটি কোর্সের মধ্যে ক্যাপস্টোন অন্যতম। রাষ্ট্র ও সমাজের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নের নিবিড় সম্পর্ক অনুধাবন এবং কার্যকর নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে চালু করা হয় ক্যাপস্টোন কোর্স। সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, এনজিও, সংবাদ মাধ্যম এবং সমাজের চিন্তাশীল প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মনোনয়নে এই কোর্সে অংশ নিয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ৪৩০ জন বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি এই কোর্স সমাপ্ত করেছেন।
এবার ৩১ জন সদস্য বা ফেলো নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এই কোর্স। উদ্বোধনী দিনে পরিচয় পর্বের পর সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে কোর্সের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়। শুরুর দিন থেকেই অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে এক ধরনের ভালো লাগা শুরু হয়। রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এমন সম্মিলন অতীতে আমি কখনো উপভোগ করিনি। কোর্সের সকল সদস্য   স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাবান, আচরণে অমায়িক এবং পারস্পরিক সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক। স্বাভাবিকভাবেই একটি সুন্দর উপভোগ্য পরিবেশ তৈরি হতে সময় লাগেনি। ওয়ার্কিং সেশনের ফাঁকে ফাঁকে আলাপচারিতায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত সম্পর্ক।

দ্বিতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রাম, রাঙ্গমাটি এবং কক্সবাজার পাঁচদিনের সফরে এই পারস্পরিক সম্পর্কগুলো সামষ্টিকতায় রূপলাভ করে। তৃতীয় সপ্তাহে এনডিসিতে ওয়ার্র্কিং সেশনগুলো এবং সমাপনী অধিবেশন হয়ে ওঠে আরও উপভোগ্য। বিদায় বেলায় সাবাইকে বলতে শুনেছি, এত ভালো লাগার সময়টা দ্রুত শেষ হয়ে গেল। একটি চমৎকার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতে পারস্পরিক ও সম্মিলিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে সেদিন সবাই বিদায় নিয়েছেন।
ক্যাপস্টোন কোর্সটির সাজানো হয়েছে খুবই বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা নিয়ে। তিন সপ্তাহের কোর্সে ফেলোদের মনোযোগ ধরে রাখা, বিষয়ভিত্তিক চর্চায় উৎসাহী করা এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের উন্নয়নে তা কাজে লাগানোর কৌশল ছিল কোর্সটির নিখুঁত গাঁথুনিতে। সদস্যদের ভালো লাগার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল এই বৈজ্ঞানিক চিন্তার কারণে। ভালো লাগার মনোরম পরিবেশে এই কোর্সে বহুমুখী বিষয়ে ব্রিফিং, প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব, মতবিনিময়ে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। বিষয়ভিত্তিক ওয়ার্কিং সেশনগুলোর মধ্যে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রেক্ষিতে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ, স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি, স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বাংলাদেশের সংবিধান, ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, একবিংশ শতাব্দীর নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের গবেষণালব্ধ উপস্থাপনা এবং বিস্তারিত আলোচনা অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যকে আলোকিত করেছে। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা সফরে সমৃদ্ধ হয়েছি অনেক অজানা বিষয়ে। চট্টগ্রামে আমরা দেখেছি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কিভাবে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। রাঙ্গামাটিতে স্থানীয় নিরাপত্তায় দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর কষ্টকর ও পরিশ্রমী কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের ব্রিফিং ও মতবিনিময়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছি পাহাড়ি এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে সরকারের ভাবনা। কক্সবাজারে জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় ধারণা পেয়েছি উন্নত, আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পর্যটননগরী সম্পর্কে।

আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তব রূপলাভ করবে বলে কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা। রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপেট্রিয়েশন কমিশনারের (আরআরআরসি) সঙ্গে আলোচনায় ধারণা পেয়েছি রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে। ঢাকায় ফিরে আরও এক সপ্তাহে নতুন বিষয়বস্তু নিয়ে ওয়ার্কিং সেশন উপভোগ করেছি। জেনেছি আরও অনেক বিষয়ে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাত্রা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ারক্রাফটে। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথম দিন বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে রাতে কোর্সের দুই স্থানীয় সদস্যের আয়োজনে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। পরদিন সেনাবাহিনীর ২৪ ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে মিনিবাসে রাঙ্গামাটি যাত্রা। দুপুরে পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রাতে রাঙ্গামাটি ক্যান্টনমেন্টের প্রান্তিক হলে অপূর্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাঙালি ছেলেমেয়েদের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। পরদিন সকালে কাপ্তাই লেকের দুর্গম এলাকায় স্থাপিত সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন ছিল শিক্ষা সফরের উল্লেখযোগ্য অংশ। বিদ্যুৎবিহীন দুর্গম দ্বীপে স্থাপিত ক্যাম্পে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর জোয়ানরা।

একই সঙ্গে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি। নিরাপত্তার পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষা সহায়তা, মূল ভূখ- থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত, প্রয়োজনে উপজেলা ও জেলা সদরে পাঠিয়ে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দেওয়াসহ নানা ধরনের সহযোগিতামূলক কাজ করে চলেছেন সেনা সদস্যরা। ক্যাম্পে জোয়ানদের আন্তরিক অভ্যর্থনায় মন ছুঁয়ে গেছে সবার।
ক্যাম্প থেকে রাঙ্গামাটি ফিরে মিনিবাসে চট্টগ্রাম এবং বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে কক্সবাজার। বিকেলে কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির নিজস্ব সাগর সৈকতের অপূর্ব সৌন্দর্য অবগাহনে দূর হয়ে যায় সারাদিনের ক্লান্তি। উপভোগ্য একটি সন্ধ্যা কাটে সমুদ্র সৈকতে। পরদিন সকালে ছিল আরআরআরসির সঙ্গে মতবিনিময়। দীর্ঘ মতবিনিময়ে জানতে পেরেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম, বিদেশী সহায়তা এবং সরকারের ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা। আরআরআরসি কার্যালয় থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। পর্যটননগরীর ভবিষ্যৎ, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও পরিবেশের ওপর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রভাব ইত্যাদি বিষয় স্থান পায় আলোচনায়।

রাতে হোটেলের ক্যান্টিনে ফেলোদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় ভিন্নধর্মী এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পীর প্রাধান্য খর্ব করে কোর্সের সদস্যরা পরিবেশন করেন চিত্তাকর্ষক সংগীত, জোকস, আবৃত্তি ইত্যাদি। সংগীত পরিবেশনকারী সদস্যদের নাম দেওয়া হয় ‘গানের পাখি’। সারাদিনের কঠিন কঠিন বিষয়গুলোতে জট লেগে থাকা মনোজগতে তৈরি হয় ভালো লাগার আবেশ।
পরদিন সকালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময়ে সকল সদস্যের মনে জাল বুনতে শুরু করে একটি উন্নত, পরিবেশবান্ধব আধুনিক পর্যটন শহরের স্বপ্ন। বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নিয়ে আমাদের অভিযোগ ছিল পর্যটনবান্ধব পরিবেশের অনুপস্থিতি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি নিয়ে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর (অব) মোহাম্মদ নুরুল আবসার জানালেন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর, মেরিন ড্রাইভ, রাজধানীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ, সাবরং অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী-মাতারবাড়ির উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে কক্সবাজার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান। নির্মিত হচ্ছে সাবরংসহ তিনটি টুরিজম পার্ক, যেখানে থাকবে বিদেশীদের জন্য বিশেষায়িত সুযোগ-সুবিধা।

সমুদ্র সৈকতগুলো সাজানো হচ্ছে আধুনিক সাজে। লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট ছাড়াও সাজানো হচ্ছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নাজিরটেক সৈকত। লাবণী পয়েন্ট থেকে নাজিরটেক পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে সংযোগ সড়ক। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রশস্ত ডাইক বা প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ডাইকের ভিতরে থাকবে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, পর্যাপ্ত বাথরুম, শপিং সেন্টার, কার পার্কিং ইত্যাদি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ এবং মহেশখালীকে সংযুক্ত করা হবে ক্যাবল কারের মাধ্যমে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আগামী ৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সুন্দর এই মহাপরিকল্পনায় উচ্ছ্বসিত কোর্সের সদস্যরা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। কক্স ডিএর কার্যালয় থেকে আমরা যাই রামু উপজেলায় সেনাবাহিনীর নতুন প্রতিষ্ঠিত ১০ম ইনফেন্ট্রি ডিভিশন পরিদর্শনে। বিকেলে কক্সবাজার হয়ে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরে আসি। 
তৃতীয় সপ্তাহে এনডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় কয়েকটি সেশন। দ্বিতীয় দিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বিজয়কেতনে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ট্রায়াল হয়েছিল এই স্থানে। এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয় এবং খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। মামলার ট্রায়াল রুমটি অক্ষত রাখা হয়েছে। মামলা চলার সময় বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারটিতে বসতেন সেটি সংরক্ষণ করা হয়েছে যতœ করে। একই সঙ্গে মামলার সকল আসামি এবং পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকদের চেয়ারগুলোও সংরক্ষণ করা হয়েছে। জাদুঘরের আদলেই রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা যন্ত্রপাতি। দেওয়ালে দেওয়ালে লাগানো হয়েছে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস। বিজয়কেতন পরিদর্শন শেষে কোর্সের সদস্যদের নেওয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে। প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) কোর্সের সদস্যদের এই বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।     
কোর্সের সমাপনী অধিবেশন ছিল বর্ণাঢ্য। প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি তার বক্তৃতায় জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান। এনডিসি কমান্ডেন্ট লে. জেনারেল আকবর হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে নিবেদিত নেতৃত্বের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ক্যাপস্টোন কোর্স। কোর্সে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন টিভি চ্যানেল ডিবিসির সম্পাদক প্রণব সাহা এবং এসিআইয়ের মেডিক্যাল সার্ভিস বিভাগের প্রধান ডা. রুমানা দৌলা।

সমাপনী দিনে কোর্সের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে তৈরি হওয়া মেলবন্ধন অটুট রাখতে পুনর্মিলনীর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ক্যাপস্টোন কোর্সটি এতটা আকর্ষণীয় হওয়ার পিছনে রয়েছে এর পরিচালনায় সম্পৃক্ত এনডিসি কর্মকর্তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-ভাবনা, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং গভীর আন্তরিকতা। তাদের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অনেকটাই সহায়ক হবে।
    লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×