ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ডুবন্ত রাজধানী

-

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডুবন্ত রাজধানী

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে। সঙ্গে বজ্রপাত ও দমকা হাওয়া। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। মহাযানজট হয় এতে, কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বিপুল বিচিত্র ভোগান্তিতে পড়েন রাতে ঘরমুখী লোকজন। মিরপুরে কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে জলাবদ্ধ সড়কে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে জলমগ্ন সড়কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন একই পরিবারের চারজন। তাদের তিনজনই মারা গেছেন। ওই পরিবারের সাত মাস বয়সী এক শিশু গুরুতর অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের ভাষ্যমতে, এই পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে আরেক তরুণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। টানা বৃষ্টিতে ঢাকাবাসীদের যে দুর্ভোগ, তা ভাষায় প্রকাশের নয়। নানা সমস্যা ও চাপে ভারাক্রান্ত ঢাকা এবার বৃষ্টিতে ডুবতে বসেছে।
২০০১ সালে ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প’ নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ২০১১ সালে ২০৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপের জন্য আরও ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষে রাজপথ যেন পরিণত হয় জলাশয়ে। এ দুটি প্রকল্পই নয়, গত দেড় দশকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা ওয়াসা এবং অবিভক্ত ও বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন। করপোরেশন দুটি মহানগরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ খরচ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে। কমেনি জলাবদ্ধতা। প্রতিদিন জীবন-জীবিকার জন্য ঘরের বাইরে বের হতে হয় যাদের, তাদের কাছে বর্ষাকাল আদো সুখকর নয়, বরং বিপন্ন সংকেত। বর্ষায় জলাবদ্ধতা রাজধানীর একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
আধুনিক মহানগরীতে জলাবদ্ধতার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার জলাধার, জলাশয় হিসেবে ঝিল ও খালের কার্যকারিতা বিগত দশকগুলোতে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে দখল-দূষণের কারণে। এটি যে কত বড় অপরিণামদর্শিতা এবং আত্মঘাতী ক্রিয়াকলাপ, সেটি নগরবাসী প্রতিবছরই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এর ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটেছে মারাত্মকভাবে। অন্যদিকে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পথ রুদ্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা ও জলজট হয়ে উঠেছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-স্বরূপ। সব মিলিয়ে ঢাকার অধিকাংশ খালই মরণ দশায় পতিত। এসব খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।

রাজধানীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে হলে খালগুলো পুনরুদ্ধারসহ টেকসই পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। খালগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কেউ দখল বা ভরাট করতে না পারে। একইসঙ্গে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও আধুনিক করা আবশ্যক।

×