ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১

দূষণ ও অপব্যবহার

মোস্তাফিজুর রহমান সাফি

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দূষণ ও অপব্যবহার

দূষণ ও অপব্যবহার

বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বহু দ্বীপ ও উপকূল পানিতে তলিয়ে যাবে আগামী দশকগুলোতে। পানির আধিক্য নিয়ে এমনই শঙ্কা বিজ্ঞানীদের মাঝে। অপরদিকে কমছে পানযোগ্য পানির মজুদ। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে যাচ্ছে যে ভূ-বিজ্ঞানীগণ বলছেনÑ নিকট ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের কথা। তাই এই শতাব্দীর অন্যতম প্রধান সমস্যা এখন ‘ওয়াটার প্যারাডক্স’। কয়েক দশক আগেও কৃষিকাজের প্রায় শতভাগ পানি পুকুর, খাল ও নদীর মতো উৎস থেকে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে নদী-নালা দূষিত হয়ে পড়েছে।

এই পানি দিয়ে চাষাবাদ আর সম্ভব নয়। কৃষিকাজে পানির যোগান ঠিক রাখতে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। অন্যদিকে কমেছে বৃষ্টিপাত। নগরায়নের ফলে কংক্রিট দিয়ে মুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে মাটির উপরিভাগ। ফলে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে চলে যাচ্ছে নদী হয়ে সমুদ্রে। যে পরিমাণ পানি তোলা হচ্ছে, সে পরিমাণ পানি ভূগর্ভে সঞ্চিত হতে পারছে না। তাই প্রতি বছর পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। ইউনিসেফের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ মিঠাপানির উৎসের কাছে বসবাস করে। কিন্তু দূষণের ফলে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ সুপেয় পানির অভাবে রয়েছে। বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি প্রাপ্তির অধিকারকে জাতিসংঘ মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

কিন্তু নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও অপচয় ও দূষণের কারণে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণির। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪০০ শিশু দৈনিক মারা যায় বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং এ সংশ্লিষ্ট রোগের কারণে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে গোসলের জন্য ৬ থেকে ৪৫ লিটার পর্যন্ত পানি নষ্ট করে। কাপড়কাচা, পয়ঃনিষ্কাশন এবং গৃহস্থালি কাজে পানি অপচয়ের হার আরও মারাত্মক। ট্যাপ খুলে রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি দূষিত পানির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের পর্যাপ্ত কৃষিজ্ঞানের অভাবে প্রয়োজনের অধিক পানি তারা চাষাবাদে ব্যবহার করে। এতে একদিকে যেমন অপচয় হয়, অন্যদিকে কমে ফসল উৎপাদন।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় লোনা পানি এসে ঢুকছে মিঠাপানির উৎসের সঙ্গে। ফলে পানযোগ্য পানির উৎস দিন দিন কমে যাচ্ছে। জলাধার সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা সচেতন হলে পানি অপচয় এবং দূষণ দুটোই হ্রাস পাবে। এতে সুরক্ষিত হবে মানুষের পানি প্রাপ্তির অধিকার। পানি অপচয় রোধে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে এই বিপদ আরও ঘনীভূত হবে।
 ঘোড়ামারা, রাজশাহী থেকে

×