ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন আছে প্রয়োগ নেই 

মোতালেব বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৪ জুন ২০২৩

মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন আছে প্রয়োগ নেই 

.

মাদক শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। ফেসবুকের নিউজফিডে, পত্র-পত্রিকায় প্রতিনিয়ত উঠে আসে মাদকের ভয়াবহ কুফলের সংবাদ। এছাড়াও মাদক সংশ্লিষ্ট নানা ঘটনার খবর প্রায়শ সরাসরি আমরা শুনতে পাই। মাদকের প্রভাব পরিণতি অনেক ভয়াবহ। এর কুফল ভয়াবহ পরিণাম থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন আইন।

তারই ধারাবাহিকতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ রহিতক্রমে সর্বশেষ তৈরি হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮। এটি ২০১৮ সালের ৬৩ নং আইন। মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ চাহিদা হ্রাস, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা পুনর্বাসনকল্পে বিধান প্রণয়ন এবং অপব্যবহার চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য এই আইন প্রণীত হয়। তবে বাস্তবে এই আইনের প্রতিফলন খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি আপামর সাধারণ জনগণও এই ধরনের অপরাধগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ছাড়াও বাংলাদেশে এমন অনেক আইনই আছে যেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায় না।

বলা হয়ে থাকে আইন সবার জন্য সমান। অথচ আমাদের সমাজের অনেক প্রভাবশালী নিয়মিত মাদকদ্রব্য সেবন করে চলেছে। কিন্তু তাদের ক্ষমতার কাছে হার মেনে যাচ্ছে এই আইনের উদ্দেশ্য প্রয়োগ। মাদকদ্রব্য উৎপাদন সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা, মাদকদ্রব্য সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে আমরা দেখি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় জনসচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ায় এই অপরাধ প্রবণতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে নকল মেডিক্যাল ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মাদক ক্রয় সেবন করে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ১১ ধরার উপধারা () অনুসারে, অনুমোদনপ্রাপ্ত বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিদের বিশেষ মাদকদ্রব্য সমূহ গ্রহণের সুযোগকে অনেকে পুঁজি করে নিজেদের অনৈতিক উদ্দেশ্যকে হাসিল করছে।

২০১৮ সালের এই মাদক আইন ভঙ্গ করার কারণে শাস্তির বিধান সর্বনিম্ন শাস্তি মাসের কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ড এবং অর্থদন্ড এখানেও আইনের প্রয়োগহীনতা দেখতে পাওয়া যায়। নিজ ক্ষমতাবলে অনেকেই পার পেয়ে যায় এবং এই অপরাধ পুনরায় সংগঠিত করার মতো জঘন্য অপরাধ করে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিনিয়ত মাদকের উৎপাদন মাদকসেবীর সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবার ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না। যদি কেউ করেন তাহলে দন্ড হিসেবে অনধিক ৩০০ (তিনশত) টাকা অর্থদন্ডে বিধান রাখা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন একই অপরাধ করেন তাহলে তিনি পর্যায়ক্রমে উক্ত ন্ডে দ্বিগুণ হারে ন্ডনীয় হবেন। কিন্তু এই আইনেরও সঠিক প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই না। বাস্তবে প্রায় সবখানেই অনেককে প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা যায়, যেন এটি এখনও একটি স্বাভাবিক বিষয়।

তরুণ প্রজন্মকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলা হলেও বর্তমানে তরুণ সমাজ যুবসমাজ প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে মাদকাসক্ত হয়ে এবং মাদক অপরাধে যুক্ত হয়ে। যা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে আমাদের দেশের একটি প্রধান সমস্যাবেকারত্ব যার ফলস্বরূপ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে মাদকসেবী হয়ে পড়ছে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী। অবশ্য মেয়েদের মাদকাসক্তির সংখ্যা সীমিত।

প্রকৃতপক্ষে মাদকের সহজলভ্যতা, আইন প্রয়োগে শিথিলতা, নতুনত্বের প্রতি আকাক্সক্ষা প্রভৃতি মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। তাই এখনই যদি মাদক সেবনের এই ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টি না করা যায় বিশেষ করে যুবসমাজে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মাদক সেবনের শাস্তি সর্বত্র এই সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ যদি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়, তাহলে জনসচেতনতা বেশি বৃদ্ধি পাবে, মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে মুক্তি পাবে লাখো মাদকসেবী।

লেখক : সমাজকর্মী

×