ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা

-

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৩ জুন ২০২৩

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা

সম্পাদকীয়

দেশের সাধারণ মানুষ, যাদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা, তারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় সন্তুষ্ট। এগুলোর গুণগতমানও ভালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার অপারেশনাল প্ল্যান পরিচালিত যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। উল্লেখ্য, দেশে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে নারী ও শিশুসহ সাধারণ গরিব মানুষ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধপত্র পেয়ে থাকে। সম্প্রতি এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে জাতিসংঘ কর্তৃক। এর উদ্ভাবন, সৃজন ও বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বহুল প্রশংসিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক অনগ্রসর দেশের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের এই মডেলকে অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও গৌরবের। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় সন্তুষ্ট। অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা-ব্যবস্থা ও পরিবেশও সন্তোষজনক। 
বর্তমান সরকারের অনেক সমুজ্জ্বল সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো সুবৃহৎ বহুজাতিক দাতা সংস্থারও। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির সুবাদে সম্ভব হয়েছে এই অগ্রগতি। এর আওতায় ২০১৪ সাল থেকে দেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেওয়ার হার বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি। ইপিআই কর্মসূচির মৌলিক টিকা গ্রহণের হার বর্তমানে ৮৮ শতাংশ। এসব সূচকের অগ্রগতির কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে অনেক,  ৭২ বছরের বেশি। 
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) আওতায় ৫ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড অর্জনে সক্ষম হয়, যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করে তুলেছে। মোট দেশজ আয়ের তুলনায় (জিডিপি) পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। ফলে, অনেকেই সরকারের সরবরাহের বাইরে স্বাস্থ্য সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা আরও সম্প্রসারণসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে আরও সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও গতিশীল রাখতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত।

×