
মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে সর্বনাশ ডেকে আনছে
মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে সর্বনাশ ডেকে আনছে। যুব সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ পরিণতির দিকে। তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি সহজেই মাদকদ্রব্য পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে রযেছে যেমন- হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডাল, আইস, সিসা, বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন, ইয়াবা ট্যাবলেট। এক্ষেত্রে মৃত্যু বা পঙ্গুত্ববরণ এড়ানো যায় না। মাত্র কয়েক হাজার টাকার কাঁচামাল দিয়ে অন্তত এক লাখ ইয়াবা তৈরি করা যায়, যার মূল্য প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকা। ফলে লোভে পড়ে অনেকেই এটি তৈরি করছে। বর্তমান সময়ে গোটা দেশে যত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ বাণিজ্যের মতো সংঘবদ্ধ অপরাধ, মাস্তানি হয়ে থাকে মাদকাসক্তি তার অন্যতম প্রধান কারণ।
এই মাদকাসক্তির কারণেও দাম্পত্য কলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা দিন দিন বাড়ছে। অতিমাত্রায় ক্ষতিকর ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ‘আইস’ স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে। জানা যায়, এক কিলোগ্রাম ‘আইসে’র দাম পড়ে প্রায় এক কোটি টাকা। কাজেই মাদকের প্রবেশ ও ব্যবসা রোধে কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে ভয়ংকর সব অপরাধ। কাজেই মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকার পরও মাদকের অবৈধ প্রবেশ ও ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আবার শর্ষের মাঝে ভূতের কারণেও এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, বন্ধু নির্বাচন, দায়িত্বশীল উপায়ে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা সম্ভব। পারিবারিকভাবে সন্তানের ওপর খেয়াল রাখতে হবে যে সে কোনো অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে কিনা, কেমন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে মিশছে। পরিবারের কেউ মাদকে আসক্ত হলে তাকে এর খারাপ দিকগুলো বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে। আজকাল পরিবারে সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ না থাকার কারণে পরিবারের অনেক সদস্য মাদকাসক্তে জড়িত হচ্ছে। তাই পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা অতি জরুরি।
খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্ম কাজে নিয়োজিত থাকতে উৎসাহিত করতে হবে। মাদকদ্রব্য সেবন বন্ধ করার জন্য নিজের ইচ্ছাই যথেষ্ট। সামাজিকভাবে মাদক দ্রব্য প্রসার রোধে এর গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। মাদকদ্রব্য সম্পর্কে নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রদান করা। মসজিদের ইমাম ও খতিব মাদক জনগণকে সচেতন করতে হবে। মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও যথপোযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সুনামগঞ্জ থেকে