
সম্পাদকীয়
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, দেশের মোট ১৩ জেলায় প্রকাশ্যে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা চলে। এসব জেলা থেকে বন্যপ্রাণী ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আনা হয়। ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে ও চট্টগ্রাম সমুদ্রপথে প্রাণী বিদেশে পাচার করা হয় মোটা টাকার বিনিময়ে। এমন একটি উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। সেদিনই ছিল বিশ^ বন্যপ্রাণী দিবস। বহু প্রাণী আছে, যাদের অস্তিত্বের সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।
আমাদের আশপাশের একই সময় বেঁচে থাকা চেনা-অচেনা বন্যপ্রাণী এত দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে যে প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী, খাদ্য নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রক, আবহাওয়াবিদ থেকে শুরু করে যে কোনো সচেতন মানুষই এই গ্রহটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা বোধ করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রতিবছরের ৩ মার্চকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
আবাসস্থল হারিয়ে ক্রমেই হুমকি বাড়ছে দেশের বন্যপ্রাণীর। অনেক বণ্যপ্রাণী বাসস্থান হারিয়েছে, অনেকের সংকুচিত হয়েছে। ফলে, আমাদের বন্যপ্রাণীরা প্রায় বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে। বন উজাড়ে হ্রাস পাচ্ছে বন্যপ্রাণীর খাদ্যের জোগান। উদ্বাস্তু প্রাণীরা মানুষের ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে। বাংলাদেশে চার ধরনের বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী। আইইউসিএন ও বন অধিদপ্তর যে লাল তালিকা করেছে, তাতে দেখা যায় দেশের ১৬১টি প্রজাতি হুমকির মুখে। এরা মহাবিপন্ন, বিপন্ন কিংবা সংকটাপন্ন।
চার শ্রেণির প্রাণীর মধ্যে তুলনামূলকভাবে স্তন্যপায়ীর অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। বিশেষ করে মিঠাপানির নদীর শুশুক লাল তালিকায় বিপন্ন প্রজাতি। এর অর্থ হলো এটি নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে নদী রক্ষা করতে হবে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপায়গুলো হলোÑ গাছ না কাটা এবং প্রচুর গাছ লাগানো। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। নদীর পানি দূষিত করা যাবে না। পাখি শিকার না করা। রাস্তাঘাটের কুকুর-বিড়াল না মারা। শখের বসে পাখি খাঁচায় আটকে না রাখা। প্লাস্টিক ব্যবহার কম করা ও তা পরিবেশে না ফেলা। এক কথায়, যেহেতু আমরা সবাই পরিবেশের অংশ, নিজেকে, নিজের পরিবারের ওপর যেমন পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ভালোবাসি, ঠিক তেমনি প্রকৃতির প্রত্যেকটি জিনিসকে নিজের মনে করে ভালোবাসুন। তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকতে পারে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কিছু করার এখনই সময়। যুক্তিসম্মত উন্নয়ন, বন্য প্রাণের উপযোগিতা সম্পর্কে গ্রামীণ জনগণকে পরিপূর্ণ সজাগ করা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সময় উপযোগী শোধন এবং কঠোর প্রয়োগ সময়ের দাবি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী আমাদের দেশে আছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনি কাঠামো দেশে রয়েছে। সংবিধানে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। এখন দরকার এসব প্রতিপালন করা। বন্যপ্রাণী বাঁচলে মানুষও বাঁচবে, বাঁচবে ক্রমশ বিপণন হতে থাকা সবুজ, ততোধিক বিপন্ন আমাদের বসতিÑ পৃথিবী নামের গ্রহ।