ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরজীবীদের বিতাড়ন জরুরি

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

পরজীবীদের বিতাড়ন জরুরি

.

জনশ্রুতি মতে কুৎসিত বুদ্ধিমত্তার অর্বাচীন-অপাঙক্তেয়-অযৌক্তিক অপপ্রয়োগে বংশপরম্পরায় মদ-মাদক ব্যবসায়ী, ভূমি-জলদস্যুদের উত্তরাধিকারী, প্রতারণা-জালিয়াতি-ছলচাতুরীর পারঙ্গম দুশ্চরিত্রের কতিপয় কথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব-লেখক-সাংবাদিক-কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ ইত্যাদি নামে দেশবাসীকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে চলেছে। ছদ্মবেশী বাহ্যিক পোশাক-পরিচ্ছদ-আচার-আচরণ, বাচনিক কথাবার্তা-সবক দেওয়ায় অভ্যস্ত এসব আপাদমস্তক দুর্নীতি-অশুভকর্মে নিয়োজিত কদর্য চরিত্রের মুখোশ  উন্মোচন দেশ রক্ষার জন্য অতীব জরুরি। অসৎ-অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় পদ-পদায়ন-পদক দখলে এদের পিছনে রয়েছে শক্তিশালী মাফিয়া-সিন্ডিকেট-বিভিন্ন দল-রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সুবিধাভোগী হিংস্র চক্র। সেনা-স্বৈর শাসনামলে আবির্ভূত দেশবিরোধী অর্থলিপ্সু মানবরূপী এসব দানবের অপকর্ম দেশবাসীর হৃদয়ে যারপরনাই আর্তনাদ তৈরি করছে। লবিং-তদবিরনির্ভর এসব কথিত ব্যক্তি নীতি-নৈতিকতার চরম স্খলনে যে কোনো উপায়ে তাদের হীন অভিপ্রায় কার্যকর করতে সিদ্ধহস্ত। সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে যে কোনো বেসামরিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন পদে অধিষ্ঠিত হতে এদের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা স্ব স্ব অঞ্চল-প্রতিষ্ঠানে কুখ্যাতির আবরণে আবদ্ধ। যে কারণে ন্যূনতম সম্মানিত না হয়েও অবাঞ্ছিত-অনভিপ্রেত-দুষ্ট বলয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের পদ বাণিজ্য সর্বত্রই পরিলক্ষিত।
মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার একার পক্ষে সরাসরি সবকিছুর তদারকি দুরূহ ব্যাপার বটে। সত্য-বস্তুনিষ্ঠ পন্থায় তাঁর  গোচরীভূত হওয়া-আমলে নেওয়ার বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মহল অদৃশ্য দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করে তাঁকে আঁধারে  রাখছে কিনা তা নিগূঢ় তদন্তের দাবি রাখে। তিনি প্রজ্ঞা-মেধা-সততা-যোগ্যতা-নির্ভীকতায় সমৃদ্ধ দৃঢ়চেতা-দেশপ্রেমিক সফল-সার্থক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বপরিম-লে অতি উঁচুমার্গে সুপ্রতিষ্ঠিত। অদম্য-অগ্রগতিতে এগিয়ে নেওয়া উন্নয়ন মানদ-ে আকাশচুম্বী উচ্চতায় তিনি দেশকে মর্যাদাসীন করার এক বিস্ময়কর অধ্যায় রচনা করেছেন। এতসব অর্জনের বিপরীতে গুটিকয়েক সন্ত্রাসী-জঙ্গি-অন্ধকারের পরাজিত শক্তির দোসরদের দেশবিধ্বংসী অপকৌশল ইতোমধ্যেই দেশ এবং দেশের বাইরে দৃশ্যমান। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে দল ও সরকারে ঘাপটি মেরে অবস্থান নেওয়া চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিতাড়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সৎ-চৌকস সদস্যের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটন এবং যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ইত্যাকার বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা অনিবার্য। অন্যথায় চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের নিষ্ঠুর বেড়াজাল নির্মাণে উল্লেখ্য, পরাজিত অপশক্তির অপকৌশল অবলম্বন দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রতি পদে পদে নানামুখী অন্তরায়-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে অধিকতর বেপরোয়া হবে।       
সাম্প্রতিককালে দেশে নানা দল-মতের ছদ্মাবরণে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যতিব্যস্ত কিছু সুশীল সমাজ-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী নামধারীর অশুভ অপতৎপরতা সকলের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যক্তি দল ও সংগঠনের পক্ষ অবলম্বনে অযাচিত আলোচনা-সমালোচনা-সংবাদ সম্মেলন করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। অতীতে দেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে খ্যাত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতি নিয়ে ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা জাতিকে এখনো হতাশায় নিমজ্জিত করে রেখেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকে কোনো না কোনো দেশীয়-আন্তর্জাতিক দল-উপদল-সংগঠনের সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গন বা রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ের বিপরীতে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা দালাল-গুপ্তচরবৃত্তি পরিত্যাগ করে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এটিই সবার কাম্য। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে নৈতিক সংকট ক্রমশই প্রকট হচ্ছে। দেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, উন্নতি-আগ্রগতিতে যে পেশাজীবীদের এমন অবদান তারা এখন শতধাবিভক্ত এবং অপরাজনীতিতে লিপ্ত। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন তাদের অরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায়  পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধতার বিপরীতে আরও বিভক্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।    
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীকোষ’ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক-বিজ্ঞানী-চিত্রশিল্পী-কণ্ঠশিল্পী-সকল পর্যায়ের শিক্ষক-গবেষক-সাংবাদিক-রাজনীতিক-আইনজীবী-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-স্থপতি-ভাস্কর-সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী-চলচ্চিত্র ও নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী। যারা দেশের স্বাধীনতাকে ভিত্তি করে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তাদের বিচার-বুদ্ধি-বিচক্ষণতা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কাজ করে।’ অধিকন্তু সংস্থাটির অভিধানে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘যারা সমাজ ও সংস্কৃতিসচেতন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ সুশিক্ষিত মানুষ, যারা বুদ্ধির বলে বা বুদ্ধির কাজ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও দার্শনিক বুদ্ধিজীবীকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টাও করেছেন। বর্তমান বিশ্বের অত্যন্ত খ্যাতিমান মার্কিন চিন্তাবিদ অধ্যাপক নোয়াম চমস্কির মতে ‘বুদ্ধিজীবীরা যুক্তিভিত্তিক চিন্তা-ভাবনা অনুসরণ করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কাজের চুলচেরা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করবেন এবং সেসব নিয়ে কথা বলবেন। তারা জনগণের পক্ষ থেকে সত্যকে অনুসন্ধান করবেন এবং তা জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন। এই বুদ্ধিজীবীরা যে কোনো পেশারই হতে পারেন। অধ্যাপক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, শিল্পবোদ্ধা, আইনজীবী বা হতে পারেন রাজনীতি আলোচকও।’
ইতালীয় চিন্তাবিদ গ্রামসি বলেন, ‘সব মানুষই বুদ্ধিজীবী, কিন্তু সব মানুষই সমাজে বুদ্ধিজীবীর কাজ করেন না। সমাজে অনেকে আছেন যারা ঐতিহ্যগতভাবেই বুদ্ধিজীবী যেমন- শিক্ষক, যাজক, পুরোহিত, ইমাম, সাংবাদিক। আরেক দল আছেন অর্গানিক বুদ্ধিজীবী যারা সব সময়ই নিজ নিজ শ্রেণিগত অবস্থানে থেকে জগৎকে ব্যাখ্যা করেন। তারা পুঁজিবাদী অর্থনীতি-সংস্কৃতি-রাজনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে চেষ্টা চালান জনমতকে প্রভাবিত করতে।’ ফরাসি দার্শনিক জুলিয়েন বেন্দার ভাষায় ‘প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তারাই যারা জাগতিক লাভের ঊর্ধ্বে উঠে নিঃস্বার্থ এবং আপোসহীন জ্ঞানচর্চায় ব্যস্ত থাকেন, সত্য উচ্চারণে তারা থাকেন নির্ভীক, এমনকি সত্য প্রকাশের জন্য প্রাণ সংশয়ের মতো ঝুঁকি নিতেও তারা দ্বিধা করেন না, বরং জাতির সংকটে নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করেন।’ আরেক দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদের মতে ‘বুদ্ধিজীবী এমন এক ব্যক্তি, যিনি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট বার্তা, একটি দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি সুচিন্তিত মতামত জনগণের সামনে তুলে ধরেন। কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাকে সত্য প্রকাশ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।’ তবে ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘আমি নিজেকে কখনই বুদ্ধিজীবী বলিনি এবং আমার উপস্থিতিতে কেউ আমাকে তা বলার সাহস করেনি। আমি মনে করি কোনো বুদ্ধিজীবীকে এমন কোনো ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যিনি নিজের যতটুকু বুদ্ধি রয়েছে তার চেয়ে বেশি দেখানোর ভান করেন এবং আমি আশা করি এই সংজ্ঞাটি আমার উপযুক্ত নয়।’
এটি সর্বজনবিদিত যে, হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগের বাংলা ছিল প্রধানত যাজক প্রভাবিত একটি রাষ্ট্র। তখন বুদ্ধিজীবী বলতে এই যাজকদের বোঝানো হতো এবং তাঁরাই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁদের সামাজিক মর্যাদাই একটি বৃহত্তর সমাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় ও কৌশল আবিষ্কারে প্রেরণা জোগাত। সমাজে তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রধান হাতিয়ার ছিল বর্ণপ্রথা। হিন্দুদের এই বর্ণপ্রথা সমাজকে জন্মের ভিত্তিতে কয়েকটি পেশাগত সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে। এর ফলে বিদ্যাচর্চা কেবল হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণদের মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ে। অবর্ণবাদী বৌদ্ধদের এই যাজক শ্রেণির বাইরের জনগণের জন্য বিদ্যার্জনের একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব অল্প সংখ্যক লোকের পক্ষেই সে সুযোগ গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়েছিল এবং আরও কম সংখ্যক লোক এ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। আফগান ও মুগল সা¤্রাজ্যের অংশ হিসেবে বাংলা ত্রয়োদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত মুসলমান সুলতান ও সুবেদারদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। এই সময়কালে অধ্যাত্মবাদী-বুদ্ধিজীবী সুফিদের দ্বারা বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর উনিশ শতকে বাংলার নবাবরা আমির ও মুৎসুদ্ধিদের সমন্বয়ে দরবার পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন। মুৎসুদ্ধিদের অধিকাংশই ছিলেন উচ্চবর্ণের শিক্ষিত ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ব্রাহ্মণ এবং বিচারকম-লীতে ছিলেন শিক্ষিত মুসলিম মুফতিরা।
উপনিবেশপূর্ব যুগের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভাসিত। ঔপনিবেশিক শাসনকালে উনিশ শতকের প্রারম্ভে দেশের সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি সচেতন গোষ্ঠীর উন্মেষ ঘটে। তখন কলকাতা ছিল নব্য বুদ্ধিবাদের কেন্দ্রস্থল এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ব্রিটিশ শাসনকে তাঁদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা তার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। তবে ফকির মজনু শাহ, আগা মুহম্মদ রেজা বেগ, নবাব শামসুদ্দৌলা এবং তিতুমীরের মতো সনাতনপন্থি মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ব্রিটিশ শাসনকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছেন। তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং এ ব্যাপারে কঠিন গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এমনকি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা সশস্ত্র প্রতিরোধও গড়ে তুলেছিলেন। ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌর কর্পোরেশনের সৃষ্টি, ১৮৮৫-৮৬ সালে রেল যোগাযোগ স্থাপন এবং অনেক স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় একটি বৃহত্তর শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আমাদের সকলের জানা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল অনন্য ও গৌরবদীপ্ত। পেশাজীবীদের বৃহৎ অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেল গঠন করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সরবরাহ-সাহায্যের আবেদন-বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদান-শরণার্থীদের উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পেশাজীবীদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। দেশের সকল গণআন্দোলন ও স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে পেশা-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, চলমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এদের অনেকেরই চরিত্র-খোলস পাল্টে গেছে। ত্যাগতিতিক্ষা-আত্মসমালোচনা-আত্মশুদ্ধি-আত্মনির্ভরতার প্রগতি-মনন-সৃজনশীল পন্থা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যচ্যুত এসব সুবিধাভোগী ভোগবিলাসী জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে এখন নানা যোগসাজশে অপসংস্কৃতির মোড়কে লবিং-তদবির-পরামর্শমূলক এমন নষ্ট কর্মযজ্ঞে জড়িত হওয়ার কারণে তাদের সম্মান-গ্রহণযোগ্যতা দেশব্যাপী শূন্যের তলানীতে পৌঁছেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এদের পরিত্যাজ্যতা-দল ও সরকারের যে কোনো পর্যায় থেকে তাদের বিতাড়ন সময়ের জোর দাবিতে পরিণত।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

×