ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার

আসাদুজ্জামান খান কামাল

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১০ অক্টোবর ২০২২

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপকার

বিশ্ব বিবেক শেখ হাসিনা

‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই, পিতা, মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি।’ সেদিন বাঙালী জাতিও তাঁকে নিজের করে নিয়েছিল। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮১ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে একত্রিত করেন এবং সারা বাংলাদেশ বিচরণ করে মানুষের মধ্যে মিশে যান। যাঁর ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই যেন তাঁর জীবনের ব্রত।

বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করেছেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানেই তাঁকে পেয়েছে, বৃদ্ধা মায়েরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে আপ্লুত হয়ে বলেছেন, এসেছে শেখের বেটি, এসেছে। নিশ্চই আমরা আবার এগিয়ে যাব। তিনিই জানেন এদেশের মানুষ কি চায়; বাংলাদেশের কোন্ জেলার কোন্ উপজেলার পাশ দিয়ে কি নদী প্রবাহিত; ঐ এলাকার মানুষের কি সমস্যা তা তিনি বলে দিতে পারেন। কারণ, বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ হাসিনা। তিনি সারা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে রয়েছেন।কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সংসার সামলানোর পাশাপাশি নেপথ্যে থেকে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন, তা কাছ থেকে দেখেন শেখ হাসিনা। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুও তাঁকে বেশি কাছে টেনে নিতেন। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা মাঝে মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলেন। জাতির পিতা কি কি করতে চেয়েছিলেন তা থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং তাঁর নীতি আজকে তিনি অনুসরণ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথনক্সা তৈরি করে গিয়েছিলেন, তিনি সেটাই অনুসরণ করে চলেছেন বলেই বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সারাবিশে^ বরেণ্য নেতায় পরিণত হয়েছেন।
১৯৭৫-এর কালরাতের পরে বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালীর ভাত ও ভোটের অধিকারের প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করে এক সময়ের দুর্ভিক্ষপ্রবণ বাংলাদেশকে আজকে সারাবিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন। পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
পিতার মতো তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি কখনও পিছপা হননি; দাবি আদায়ের মাধ্যমে আন্দোলন সফল করেই ফিরেছেন। সেজন্যই আজকে বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে শুধু হৃদয় দিয়েই ভালবাসেন না, তাদের আস্থা ও বিশ^াসের প্রতীক হিসেবে মনে করে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দক্ষ নেতৃত্বের ফলেই দেশে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের যুগপৎ সুবাতাস বইছে। রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বারবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হয়েছেন।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের স্থল সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে ছিটমহলবাসীর দুর্ভোগের লাঘব করা, আইসিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন ইত্যাদি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা যেমন তাঁকে অবিস্মরণীয় নেতায় পরিণত করেছে, ঠিক তেমনি বিশ্বব্যাংকের অন্যায় আচরণ ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পদ্ধা সেতু নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কঠিন প্রতিজ্ঞাদীপ্ত করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫ পরবর্তী সবচেয়ে দৃঢ় মনোবলের সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি টানা ৪১ বছর ধরে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৮ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করেছেন।
দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। ১৩ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চারগুণের বেশি বাড়িয়ে ২৮২৪ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের রিজার্ভে উন্নত করে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন। পেয়েছেন ৪০ টির বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি। লিখেছেন চল্লিশটির বেশি বই।

এক জীবনে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব অনন্য ও অতুলনীয় অর্জনের পেছনে রয়েছে নানা চড়াই-উতরাই ও স্বজন হারানোর বেদনার দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করবেন বলেই হয়ত মহান আল্লাহ তায়ালা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানোসহ কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যা করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু জাতীয় জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাৎক্ষণিক ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সময় ক্ষেপণ করেন না। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর কিছু সিদ্ধান্তে আমরা দোদুল্যমান থাকলেও পরবর্তীতে তাঁর নেয়া সিদ্ধান্তটিই যথার্থ ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অদম্য সাহস, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা, মনন-মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার বলেই তিনি আজ সফল রাষ্ট্রনায়ক থেকে হয়েছেন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।
 আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ পালন করতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মুজিব শতবর্ষে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল।’ স্বাধীনতার সুফল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুবিধাসম্পন্ন নগরে পরিণত করতে আমার গ্রাম-আমার শহর কর্মসূচীর মাধ্যমে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

কোভিড-১৯ মহামারী মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-জীবিকাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এ অবস্থা সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিকেই এশিয়া প্রকাশিত ‘নিকেই কোভিড-১৯ রিকোভারি সূচক’-এর তথ্য মতে করোনা মহামারী সামলে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভাল করেছে, সেই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে।
প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলেই এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ছিল ইতিবাচক। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করতেন পুরুষের সঙ্গে নারীকেও এগিয়ে যেতে হবে। সে জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীদের অন্তর্ভুক্তি করেছেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী শিক্ষায় ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কো পিস ট্রি এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয় এবং ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কারণে বাংলাদেশকে সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ডে  ভূষিত করা হয়। পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত সাফল্যের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ইউএনইপি থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগে ২০১৩ সালেই অর্জন করে বিশ্বকে তাক লগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ফলে, ধনী-দরিদ্রের  বৈষম্য কমে এবং বাংলাদেশে তা ক্রমহ্রাসমান। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জন করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সালে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অর্জনের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার দেয়া হয়।

দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ব সংস্থার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক নিউইয়র্কে  প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার প্রদান করে।
ব্যক্তি জীবনে আমি সৌভাগ্যবান। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম আর তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশের সেবায় কাজ করতে পারছি।  প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে যত দেখি ততই বিস্মিত হই। জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও দুর্যোগকালীন প্রতিটি সিদ্ধান্তে তিনি দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন। ওয়ান ইলেভেনের  সময় তৎকালীন সরকার আমেরিকা থেকে যখন তাঁকে দেশে ফিরতে দিচ্ছিল না, তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি আমার দেশে ফিরে যাবই এবং তিনি দেশে ফিরেছেন।

সেদিনও শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণ বাঁধভাঙা ¯্রােতের মতো সমবেত হয়েছিল। তিনি ফিরে এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার এলাকার হোমওয়ার্ক তুমি কেমন করেছ?’ জবাবে বলেছিলাম, ‘এই আসনটি (ঢাকা-১০ বর্তমানে-১২) আমরা আপনাকে উপহার দিতে পারব।’ তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘কাজ করে যাও’। কিন্তু তিনি যে আমাকে নমিনেশন দেবেন সেটা তখন ভাবতে পারিনি। নির্বাচনের পরে তিনি আমাকে বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য এবং  প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। ফলে, বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের বিষয়ে সম্যক ধারণা পাই। তাছাড়াও তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা সম্পূর্ণরূপে পালন করতে চেষ্টা করেছি। দায়িত্বগুলো যেন সুচারুভাবে পালন করতে পারি,  সেজন্য তিনি আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন, যাতে করে আরও কাজ শিখতে বা জানতে পারি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি আমাকে প্রতিমন্ত্রী করলেন। ধারণা ছিল না যে, আমি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হব। তিনি যখন আমাকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করলেন, অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। তারপর তাকে সালাম করতে গেলাম। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি বিস্মিত হয়েছ?’ বলেছিলাম,  প্রধানমন্ত্রী, আমি বিস্মিতই! তিনি বললেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে; মানুষ তাদের স্বজনদের হারিয়েছে।

এ মুক্তিযুদ্ধকে আমরা ভুলতে পারব না। তুমি একজন সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা; এজন্যই তোমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছি।’ বের হয়ে আসার সময় তিনি বলেন, আজকে থেকে তুমি সারা বাংলাদেশ ঘুরবে, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায় কি কি সমস্যা আছে, ঘুরে ঘুরে দেখবে এবং এগুলো নিয়ে কাজ করবে। তিনি আমাকে দেশের কোন্ প্রান্তে কোন্ ধরনের সমস্যা বিদ্যমান এবং তার সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দেশনা দিলেন। তাঁর নির্দেশনা মতো সারাদেশ ঘুরেছি। বাসাতেও যারা আসেন মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের কথা শুনি। চেষ্টা করি সকলের সমস্যার সমাধান করতে। রাষ্ট্রীয় কার্য সঞ্চালনে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায়ই দেখা সাক্ষাত বা কথা হয়। তিনি প্রায়ই বলেন যে, জাতির পিতা সাড়ে তিন বছরে যে সমস্ত কার্যকলাপ করে গেছেন অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হাতে নেয়া পরিকল্পনা এবং বঙ্গবন্ধু যে সব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এগুলো ধাপে ধাপে তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী বিশ্বনেতা। তাঁর দেখানো পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের বড় কোন সমস্যা হলে তিনি সারাক্ষণই আমাদের সবাইকে নির্দেশনা দেন। ২০১৬ সালে ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার রাতে  প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্ভূত হওয়া দেশীয় জঙ্গী-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে তিনি দেশবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নির্দেশনা দেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে জঙ্গীবিরোধী সভা-সেমিনার করতে।

তাঁর আহ্বানে ছাত্র, শিক্ষক, জনতা, ইমাম, পুরোহিত, সব ধর্মের গুরু, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজ প্রায় জঙ্গীমুক্ত। বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে তিনি যতটা অনমনীয়, আবার মানুষের সেবায় তিনি ঠিক ব্যতিক্রম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যখন রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল, ঠিক তখনই শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। যখন দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছিল, আমরা তাঁর দিকনির্দেশনা চেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা কি ভুলে গেছ ১৯৭১ সালের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমরা কি পার্শ¦বর্তী দেশে আশ্রয় নাওনি।

 দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাওয়াতে পারি, তাহলে এদেরকেও খাওয়াতে পারব। আসতে দাও; অন্তত জীবনটা তো বাঁচবে ওদের।’ আজ বিশ্ব বিবেক শেখ হাসিনাকে বলে ‘মানবতার জননী, স্টার অব দ্য ইস্ট।’ তিনি এখন বিশ্বনেত্রী। বিরোধী দলে থাকাকালেও তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন। বিরোধী দলে থাকাকালে ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠনের জন্য সংসদে একটি বেসরকারী বিল উত্থাপন করেন। যার ফলে বর্তমানে কোস্টগার্ড তাঁরই নির্দেশে একটি সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়েছে। যা উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তাপ্রদানসহ ব্লু-ইকনোমির নিরাপত্তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা দেশ থেকে চরমপন্থী প্রায় নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। বহু মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। দেশের শ্বাসযন্ত্র হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন এখন বন ও জলদস্যুমুক্ত এলাকা। এসব চরমপন্থী, মাদক ব্যবসায়ী ও জলদসু্যুদের পুনর্বাসনও তিনি করেছেন, যেন তারা স্বাভাবিক জীবনে স্থায়ী হতে পারে। তিনি এভাবে অসংখ্য জাতীয় সমস্যা কাঁধে নিয়ে সমাধান করেছেন এবং সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কখনও ক্ষান্ত হন না। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য, দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাঁর মতো দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বই প্রয়োজন। ২০০৮ সালে তিনি বলেছিলেন, বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। তিনি যথার্থই বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যতদিন নেতৃত্বে থাকবেন, ততদিন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

লেখক : সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

×