ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থ ব্যবস্থা ॥ কতিপয় করণীয়

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থ ব্যবস্থা ॥ কতিপয় করণীয়

.

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ মুদ্রাস্ফীতি জর্জরিত বা প্রভাবিত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থা আপেক্ষিকভাবে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বলে বলা চলে না। অন্যান্য দেশের আপেক্ষিকতায় বাংলাদেশের নিম্ন পর্যায়ের বিদেশী ঋণভার, বৈদেশিক মুদ্রার যুক্তিসম্মত পর্যায়ের মজুদ, ক্রমবর্ধনশীল রফতানি প্রবাহ এবং মোটামোটুভাবে প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং যৌক্তিক সরকারী আর্থিক ব্যবস্থাপনা উৎসারিত স্বল্পমাত্রার বাজেট ঘাটতি সার্বিকভাবে দেশের অর্থ ব্যবস্থাপনার সহনীয় ও যুক্তিসম্মত ব্যবস্থাপনার পরিচয় দিচ্ছে।
অর্থ বছর ২১ (ফিসকাল ২১) এর আগের ৫ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-পাওনার খাতে উদ্বৃত্ত কিংবা সামান্য ঘাটতি ছিল। অর্থবছর ২১ এ এই ধরনের উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯.৩ বিলিয়ন ডলার। এর তুলনায় অর্থবছর ২২ এ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৪ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির মূল কারণ ২টি। এক, বিদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরিত অর্থের কমতি। এই বছরে বিদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ২০২১ এর আয়ের থেকে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার কম হয়েছে। দুই, এই সময়ে বাড়তি রফতানির তুলনায় আমদানির বৃদ্ধি ঘটেছে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার। এ বছরে আগের বছরের তুলনায় আমদানি বেড়েছে শতকরা ৩৬ ভাগ, আর রফতানি বেড়েছে শতকরা ৩৩ ভাগ। সার্বিক এই ঘাটতির মূল কারণ আমদানি পণ্য সামগ্রীর মূল্যের বৃদ্ধি। এই বছর আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলার। এই ২৩ বিলিয়ন এর মধ্যে ৮.৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ও আমদানির মূল্যবৃদ্ধি, ৯.৭ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে কৃষি ও নির্মাণ খাতের মাধ্যমিক দ্রব্যাদির আমদানি এবং ৩.৪ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ বেড়েছে মূলধন পণ্যের আমদানি বাবদ। তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি, অপরিশোধিত তেল এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যাদির আমদানি ২০২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২ সালে কমে গিয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ। অর্থবছর ২৩ এ আমদানি ও রফতানিতে সমতা আনয়নের জন্য তাই রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে ন্যূনপক্ষে শতকরা ১৫ ভাগ। বিদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরিত আয় বাড়াতে হবে ২৩ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি কমাতে হবে ১.২৬ বিলিয়ন ডলার বা ২২ অর্থবছরের বাড়ার তুলনায় শতকরা ৮.৭ ভাগ নিচে। আমদানি বাড়ার এই প্রক্ষেপিত হার আপেক্ষিকভাবে বেশ কম। এর ওপরে আমদানি যদি শতকরা ১২ ভাগ বাড়ে, তাহলে বৈদেশিক দেনা-পাওনার খাতে এর ঘাটতি হবে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার বা অর্থবছর ২২ এর ঘাটতির সমান।

এই হিসাব ও প্রক্ষেপণ অনুযায়ী অর্থবছর ২৩ এর শেষে সম্ভবত বৈদেশিক দেনা-পাওনার হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াবে ২.৬ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতির মূল কারণ হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক মাত্রায় উঁচু পর্যায়ে রাখার চেষ্টা এবং এর সঙ্গে আমদানি পণ্যাদির মূল্য বেড়ে যাওয়া।
তর্কাতীতভাবে এই যাত্রাপথে দেশের অর্থ ব্যবস্থায় কিছু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, এসব নেতিবাচক পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। মূলত, মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঘটছে দেশের বিনিময় হারে অবনতি। অবনতির মাত্রা ও হার কমাতে হলে কতিপয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য এখনই দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এক, প্রশাসনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গতভাবে আমদানির মাত্রা কমিয়ে আনতে কিংবা কম পর্যায়ে রাখতে হবে। এর প্রধান মাধ্যম হবে টাকাকে আগের তুলনায় অবমূল্যায়িত রাখা। প্রাথমিক উপাত্তাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অর্থবছর ২২ এ সার্বিক আমদানি বৃদ্ধির শতকরা ২০ ভাগ এসেছে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবং শতকরা ১২ ভাগ এসেছে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে। আমদানির পরিমাণ বেড়েছে মূলত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির শতকরা ৭.২৫ বৃদ্ধির ফলে। এই পটভূমিকায় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শতকরা ৩ ভাগ বাড়লে আমদানি পণ্যের মূল্য শতকরা ১২ ভাগ কমবে বলে ধারণা করা যায়। মুদ্রাস্ফীতি কমবে বলে বিশ্বব্যাপী ধারণা হয়েছে। ফলত, অর্থবছর ২৩ এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলেও অর্থবছর ২৪ এ প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে আশা করা যায়। অবশ্য অনস্বীকার্য যে, প্রবৃদ্ধির এই হারে বাড়া মূলত নির্ভর করবে রফতানি বাড়ার ওপর।
গত ১২ মাসে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার শতকরা ২৫ ভাগ কমেছে। এই সময়ে আমদানির পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে এবং এর মূল্য পরিশোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দেশের ব্যাংকসমূহ গ্রাহকদের ঋণপত্র খোলার পরবর্তী তিন দিনের প্রসারিত বিনিময় হার ব্যবহার করে টাকা অবমূল্যায়নের সুযোগ রেখেছে। আশা করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় সুদের হারের কাল প্রবর্ধনে বিনিময় হারে আশানুরূপ পরিবর্তন ঘটবে। তবে এই ধরনের আশা বাস্তবায়িত হওয়া নিশ্চিত নয়। এই ধরনের অনিশ্চয়তা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন প্রক্রিয়ায় এক নতুন হিসাবের উপকরণ নিয়ে এসেছে, যা গত এক যুগে দেখা যায়নি। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংকের বিনিময় হার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।  
এ কথা স্বীকার্য যে, পারস্পরিকভাবে বিচ্ছিন্ন বাজারে বিদেশী মুদ্রার লেনদেন উৎসারিত প্রান্তিক মাত্রায় যে অসংবেদনশীল বিদেশী মুদ্রার বাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রায় সকল আর্থিক লেনদেনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি অর্ডার প্রাপ্ত ব্যাংককে কেবল সেই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডলার টাকায় পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়ার ফলে ব্যাংকসমূহের মধ্যে ডলার কেনার প্রতিযোগিতা কমছে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সার্বিকভাবে নিম্নতর হারে ডলারকে টাকায় রূপান্তরিত করতে বাধ্য করছে। সম্প্রতি রফতানিকারককে রফতানির ঋণপত্র যে ব্যাংক খুলেছে তার থেকে ভিন্নতর কোন ব্যাংকে অর্জিত ডলার টাকায় রূপান্তরের জন্য যাওয়ার অধিকার দেয়া হয়নি এবং মূলত রফতানি আদেশ প্রাপ্ত মূল ব্যাংকের ওপর রফতানিলব্ধ ডলারের বিপরীতে টাকা পাওয়ার পরিমাণ নির্ভরশীল রেখেছে। সাধারণত ডলারের মোড়কে রফতানি ও আমদানি হারের পার্থক্য একে অন্যের আরও নিকটবর্তী থাকা আশা করা যায়। ফলত এতে তৈরি পোশাকের মালিকদের কাঁচামাল আমদানির দাম বেড়েছে এবং তাদের টাকার অঙ্কে রফতানির প্রাপ্তি কমিয়ে অকারণে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিধি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও অবনমিত হয়েছে, যখন টাকা আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যায়ক্রমে অবমূল্যায়িত হয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ডলারের বিপরীতে ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশের মুদ্রা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক ডলারের সুদের হার বাড়ানোর ফলে ক্রমান্বয়ে অবমূল্যায়িত হয়েছে। এর ফলে টাকার অবমূল্যায়ন অন্যান্য দেশে তাদের মূল্যহ্রাস উৎসারিত বাজার সুবিধা পায়নি। কেননা, সেসব দেশেও তাদের মুদ্রা সমসময়ে অবচয়িত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমদানি মূল্য পরিশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডলার রফতানি ও শ্রমিক প্রেরিত আয় থেকে কম পর্যায়ে রয়েছে। এর বাইরে বেশি ব্যাংকসমূহের মধ্যে ডলার পাওয়ার জন্য অতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনের নিরিখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিস্থিতিতে বেশ পরিমাণ ডলার বাজার থেকে সংগ্রহ করে যাচ্ছে। তথাপি ব্যবহারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা  গেছে যে, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ছোট ছোট গ্রাহক বিনিময় সদনে গিয়ে অনেকাংশে ডলারের মূল্য স্থির করেছে। এই বিনিময় মূল্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রায় মুক্তভাবে দর কষাকষি করে স্থির করে চলেছে। ডলারের এই উচ্চমূল্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরিত আয়ের পরিমাণ টাকার অঙ্কে বাড়িয়েছে। শ্রমিক প্রেরিত আয় আহরণ করার প্রতিযোগিতায় টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। ফলত আমদানির মূল্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ব্যাংক টাকার হিসাবে প্রায় বিনা বাধায় বাড়িয়ে চলছে। এই কার্যক্রমে বিনিময় হার অবমূল্যায়িত হয়ে চলছে। ডলারের ৬২টি বিচ্ছিন্ন বাজার (রাষ্ট্রায়ত্ত) বাণিজ্যিক ব্যাংকের মন্ডলে বিরাজ করছে বলে প্রতিযোগিতামূলক ও ফলপ্রসূ বাজারের অনুপস্থিতিতে ডলারের দাম অবদমিত করা যাচ্ছে না। সার কথা, দেশের অর্থ ব্যবস্থার এই অবস্থায় উপনীত হতে সহায়তা করেছে অবাস্তব আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার, রফতানি থেকে প্রাপ্ত ডলার রফতানির মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত ব্যাংক থেকে ভিন্নতর ব্যাংকে রফতানিতে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে টাকা কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ডলার অবমুক্তকরণ।
টাকা-ডলারের বিনিময় ক্ষেত্রে উপরোক্ত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শোধরানোর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এক, দেশের অভ্যন্তরে আন্তঃব্যাংক বাজারে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ডলারের বিপরীতে টাকাকে ভাসমান রাখা। এর জন্য এই প্রক্রিয়ায় এখন বিচ্ছিন্ন ৬২টি বিদেশী মুদ্রাবাজার অবিচ্ছিন্ন ও মুক্ত করা প্রয়োজন। দুই, রফতানির বিপরীতে প্রাপ্ত ডলার মুক্তভাবে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিক্রয় করে রফতানিকারককে বাজার প্রক্রিয়ায় ন্যায্য টাকা আহরণে স্বাধীনতা দিতে হবে। তিন, বাংলাদেশ ব্যাংককে দেশের অভ্যন্তরীণ বিদেশী মুদ্রার বাজারে সকল ব্যাংকের কাছে চাহিদা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ডলার সরবরাহ করতে হবে। চার, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে দেশের ইতিবাচক অবস্থান কথা ও কাজে অধিকতর ফলপ্রসূর সঙ্গে উপস্থাপিত করতে হবে। জানাতে হবে যে, গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। বলতে হবে যে, অর্থবছর ২২ এর অসুবিধাসমূহ মূলত বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি এবং এই মুদ্রাস্ফীতি অর্থবছর ২২ এর শেষ থেকে শুরু করে অর্থবছর ২৩ এ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব কার্যক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সমন্বিত করে আমদানির ক্ষেত্রে পূর্ব জাহাজীকরণ পরিদর্শন প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে হবে। এর ফলে আমদানি ও রফতানি মূল্যের অধি ও অধঃ উদ্ধৃতায়ন কমে আসবে, সরকারী রাজস্ব বাড়বে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী প্রেরিত সঞ্চয়ের অন্তঃপ্রবাহ স্থিতিশীল হবে। একই প্রক্রিয়ায় অর্থ ধৌতকরণের ব্যাপ্তি কমে আসবে।
রফতানি বাড়ানো ও আমদানি কমানোর উদ্দেশ্যে বৃহত্তর কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে অধিকতর মনোযোগী হয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো এই প্রেক্ষিতে সমীচীন হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়লে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সহনীয় থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের সরবরাহ বাড়বে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যাদির দাম সরকার কর্তৃক দর বেঁধে দিয়ে নিম্নতর বা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় না। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ক’দিন আগে যে কথা বলেছেন, তা খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসরণ করা অধিকতর কর্মানুগ ও লক্ষ্যানুগ হবে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ান ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চীনে রফতানি ইউয়ানে পরিশোধিত হলে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানি ইউয়ানে পরিশোধিত হবে। এই প্রক্রিয়ায় আমদানি বিশ্ববাজারের প্রেক্ষিতে অধিমূল্যায়িত যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। অবশ্য এই পথে চীনের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত ইউয়ানের অধিকারী হলে তা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য সংগ্রহ করা যাবে না বলে সতর্ক থাকতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য বাংলাদেশী টাকায় এবং ভারতীয় রুপীতে পরিশোধনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বহমান দৃশ্যপটে বাংলাদেশের উপযোগে আসবে। বৃহত্তর ভারতীয় বাজারে দেনা-পাওনা টাকায় পরিশোধন এবং সীমান্তের কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বার্থানুকূল হবে বলা চলে। জাইকার (জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) ঋণ সহায়তা জাপানী মুদ্রায় আহরণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে টাকায় পরিশোধন জাপান থেকে মূলধন দ্রব্যাদির আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের রফতানি বাড়ানোয় সহায়ক বলে সাহায্য ও বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে অধিকতর মনোযোগী হতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমবে বলে ধরা যায় না। এই প্রেক্ষিতে দেশে উৎপাদনের চালিকাশক্তি হিসাবে জ্বালানি ব্যবহারকে লভ্য, সহজ ও যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে দেশে ও বঙ্গোপসাগরে জ্বালানির অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়াতে দৃঢ় সংকল্প হয়ে আমাদের এগোতে হবে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আহরণ এবং সর্বক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর আমাদের দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জোর দিয়ে যাচ্ছেন, তা সর্বপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য জরুরী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

   লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী

×