ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা গ্রহণকারীদের ভিড়
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অনেকটাই বদলে গেছে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা দৃশ্যপট ও সেবার ধরন। সহজেই মিলছে সব সেবা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সেবাদান নিয়ে খুশি সেবা প্রত্যাশী ও গ্রহীতারা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ আর নজরদারিতে গতি পেয়েছে ডিজিটাল সেবাদান কার্যক্রম। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি স্তরে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্কসহ বয়স্ক, অসুস্থ রোগীদের সেবাদানে মোবাইল এনরোলমেন্ট ইউনিট। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কর্মদিবসে গণশুনানি কার্যক্রম সেবা প্রত্যাশীদের কাছে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করায় কমেছে হয়রানি ও ভোগান্তি। মিলছে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান। পাসপোর্টের জন্য আবেদন গ্রহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেবা গ্রহীতরা স্বস্তি পেলেও অস্বস্তিতে পড়া এক শ্রেণীর নামধারী ও ফেসবুক সাংবাদিকসহ দালালচক্র নানা অপপ্রচার লিপ্ত রয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও রয়েছে এই খবর। যে কোন অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ময়মনসিংহ ‘জন উদ্যোগ’ এর আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চন্নু জনকণ্ঠকে জানান, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে এক সময় নানা অভিযোগ থাকলেও এখন আর তেমনটি শোনা যায় না। যে কোন মূল্যে এই সেবাদান কার্যক্রমকে ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান জন উদ্যোগের এই নেতা।
ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, নানা অব্যবস্থাপনা আর অরাজকতার মডেল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দালাল চক্রের ফাঁদ ডিঙ্গিয়ে সহজে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানি ছিল অনেকটাই নিয়তির মত। নির্ধারিত ফিয়ের বাইরে দর কষাকষির বাড়তি টাকা আর ধরাধরি ছাড়া সহজে মিলত না কোন পাসপোর্ট। অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর অসহযোগিতা সেবা প্রত্যাশীদের এই হয়রানিকে আরও অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রতিবাদ করেও মেলেনি কোন প্রতীকার। এসব নানা কারণে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। গত কোভিড পরিস্থিতি আগ পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের এমনসব অভিযোগ ছিল সবার মুখে মুখে। তবে এই চিত্র এখন বদলে গেছে অনেকটাই। সহজেই মিলছে প্রত্যাশিত সেবা।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ৩০০ ই-পাসপোর্ট। এর বাইরে ৩টি শর্তে এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট ও ম্যানুয়ালি এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট। কোন আবেদনকারী চাইলে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে তার আবেদন কী অবস্থায় আছে কিংবা হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন।
এছাড়া এসএমএস এর মাধ্যমেও আবেদনকারীকে পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে পুলিশ ভেরিফিকেশন, এনআইডি ও এফিডেভিট সম্পর্কিত কোন ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও অফিস প্রধানের গণশুনানিতে নিষ্পত্তি করায় ভোগান্তি ও হয়রানি কমে এসেছে। আবেদনকারীদের সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন এই গণশুনানি হচ্ছে। এসব নানামুখী উদ্যোগে একদিকে গতি পেয়েছে সেবাদান কার্যক্রমে। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়ে গেছে বহুগুণ। কমেছে আবেদন ও ডেলিভারির জট। ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া দক্ষিণপাড়ার রুমা আক্তার ও ময়মনসিংহ সদরের মুয়িদ হাসান তালুকদার আবেদনের পর নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির সেবা পেয়ে খুশি তারা। তবে অফিসের কর্মচারীদের আচরণে আরও সংযত ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মুয়িদ হাসান তালুকদার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। কোভিডের আগে যেখানে ২২ হাজারের বেশি পাসপোর্ট ডেলিভারির অপেক্ষমান তালিকায় ছিল, সেটি কমে এখন এক হাজারের নিচে নেমে এসেছে। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হচ্ছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধানে আবেদনকারীকে সরাসরি উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খন্দকার শরীফ উদ্দিন জানান, দালালদের হয়রানি আর বাড়তি খরচসহ নানা তিক্ততার কম বেশি অভিজ্ঞতা ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার।
পাসপোর্ট অফিসের অতি চেনা এই দৃশ্য বদলে গেছে দাবি করে এই ব্যবসায়ী জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে সেবা প্রাপ্তি অনেকটা সহজ হয়েছে। কমেছে ভোগান্তি। তারপরও দেখা গেছে অফিসে ঢোকার পথে এখনও দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে। অনেকে অফিস খুলে বসেছে। এই ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের সহায়তা দিতে দলিল লেখকদের মতো পাসপোর্ট অফিসের বাইরের দালালদের বৈধতা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।