করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে দেশে প্রথম একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হলো। সিলেট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রয়াত চিকিৎসকের পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেছেন। ডাঃ মঈনের পরিবারকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা জানি সংগ্রামী যোদ্ধার প্রয়োজন দুঃসময়েই। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন আন্তরিক অঙ্গীকারবদ্ধ যোদ্ধা তার দেশের মানুষের প্রয়োজন ও স্বার্থটিকেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দেন। সেখানে নিজের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টি নগণ্য হয়ে যায়। গোটা বিশ্বই এখন যুঝছে অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের সঙ্গে। এই যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে যারা আছেন তারা রাইফেল-বন্দুক হাতে নন, দস্তানা পরা দুটি হাত প্রসারিত করেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তারা চিকিৎসক। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তারা নিরলস কাজ করে চলেছেন মানবসেবায়, কোভিড-১৯ রোগীদের। তারাই প্রধানত এই সময়ের প্রাগ্রসর মানবিক দায়িত্বনিষ্ঠ শ্রেণী। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো সমীচীন। আমরা সকৃতজ্ঞচিত্তে গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি করোনাযোদ্ধা প্রয়াত চিকিৎসককে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্যমতে ইতোমধ্যে বিশ্বের ৫২টি দেশে ২২ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশেও কিছু সংখ্যক ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। তাই আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরও যেসব হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে বা হচ্ছে সেসব হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বা স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর সঙ্কটের বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। মোট কথা, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় চিকিৎসাকর্মীর সঙ্কট বড় বিষয় হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য দিনে ছয়জন করে চিকিৎসক ও নার্সের প্রয়োজন এবং প্রতি ১০ জন রোগীর জন্য দিনে ছয়জন ক্লিনার প্রয়োজন। যে কয়টি বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে সেসবের কোনটিতেই এ প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসাকর্মী নিশ্চিত করা চাই। করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের মধ্যে যেন সমন্বয়ের কোন অভাব না থাকে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ যেসব হাসপাতালে নিরাপত্তা সরঞ্জাম, জনবলের ঘাটতিসহ বিভিন্ন সঙ্কট রয়েছে তা নিরসনে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্মরণ রাখা চাই যে কোন মহামারীতে ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধার ভূমিকা পালন করতে হয়। দুঃখজনক হলো সমাজের কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কটূক্তির শিকার হয়েছেন। অনেক বাড়িওয়ালা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সব বিষয়েই সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বেআইনী কোনকিছু করার সুযোগ আর নেই। যারা সামাজিকভাবে ডাক্তারদের হেয় করতে চাইছে তারা বিরত হবে- এটাই কাম্য। এ ক্রান্তিলগ্নে চিকিৎসকসহ চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী পেশাগত আদর্শের পতাকা উর্ধে তুলে ধরে রাতদিন পরিশ্রম করছেন। এই কাজ শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য সব ধরনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে সেটাই প্রত্যাশিত। করোনাযুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের প্রয়োজন পূরণ সর্বাধিক বিবেচ্য, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পেশাগত পরিচয়ের বাইরে তাদের পরিচয় তারা আমাদেরই কারও না কারও স্বজন, নিকটাত্মীয়। আর মানুষ মানুষেরই জন্য। এই মানবিকতাবোধে উজ্জীবিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে এতে কোন সংশয় নেই।