ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ডিবি হেফাজত থেকে ৬ সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ৩১ জুলাই ২০২৫

ডিবি হেফাজত থেকে ৬ সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে ২০২৪ সালের পুরো জুলাই মাস ধরে টানা আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ, যার মধ্যে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ছিলেন। এ ঘটনাকে ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এতকিছুর পরও দমে না যেয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন ছাত্র-জনতা। আন্দোলনের মুখে ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও শিক্ষার্থীরা তা নাকচ করে দেয়। এজন্য ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই, ২ আগস্টকে ৩৩ জুলাই হিসেবে গণনা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার সবার স্মরণে ২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সবার স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান।
এইদিন ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কে মুক্তি দেওয়া হয়। ১ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে যান তারা। ওই সময় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম জানান, ভোর ৬টায় সবার বাসায় ফোন দিয়ে ডিবি অফিসে আসতে বলা হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা দুইদিন ডিবি অফিসে অনশন করেছেন। তারা এখন শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত বলেও জানান তিনি।
এদিকে এদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন। 
আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট (৩২ জুলাই) বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। বেশ কয়েকটি স্থানে  শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারও করা হয়। এদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে এসব কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এইদিন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)-সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদসহ সব হত্যাকান্ডের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বৈধতা নেই এমন দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার যে অন্যায় করছে এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি, হামলা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা। তারা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে প্রবাসীদের রেমিটেন্স না পাঠানোর আহ্বান জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ১৬ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণহানি, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্যানেল হু

×