
.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, আমদানি করে তার চার গুণ। বিশাল এই বাণিজ্য ঘাটতিই ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ। যে কোনো মূল্যে এ ব্যবধান কমাতে চায় দেশটি। বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের রহস্য এখানেই। প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনের। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে দেশটিকে পোশাক সংশ্লিষ্ট কারখানা স্থাপনে অপারগতা প্রকাশ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। আনতে চায় তুলা এবং জ্বালানি তেলসহ আরও অনেক কিছু। সবকিছুর বিনিময়ে আরোপিত শুল্কহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তিনদিনব্যাপি চলমান আলোচনা বাংলাদেশ সময় শনিবার প্রথম প্রহরে শেষ হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর)-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১০.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১.৫ শতাংশ কম, অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বা প্রায় ৮৯.৩ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। তিনদিনব্যাপি শুল্ক সমঝোতা আলোচনার প্রতিটি পর্যায়ে এ চিত্রই তুলে ধরছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি সহজীকরণের ওপর।
এদিকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সে সব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তি-তর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক। ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ বশির উদ্দিন শুল্ক ইস্যুর পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেন।
বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রপ্তানি পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি নয়, আমদানির পরিমাণও বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে। শুল্ক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ন্যায্য প্রত্যাশার বিষয়টি জোর দিয়ে উপস্থাপন করেন তিনি। এ ছাড়া, প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। জেমিসন গ্রিয়ার বাংলাদেশের অবস্থান মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা সম্পর্কে খোঁজ নেন। প্রায় সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টরা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। উপদেষ্টা তাদেরকে বলেন, তিনদিনব্যাপী এ আলোচনার দ্বিতীয় দিনে উভয় পক্ষই বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। আলোচনা চলছে এবং এখন পর্যন্ত ফলাফল ভালো। ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বিজিএমইএ সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের ওপর শুল্কভার যেন ভারত, পাকিস্তান বা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি না হয়। বরং সমান বা কম হলে ভালো। তিনি বলেন, যেসব ইস্যুতে আমাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে সরকার যেন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই অনুরোধ জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ট্যারিফ আলোচনায় অগ্রগতি সম্পর্কে উপদেষ্টার কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। তিনি আশার কথা জানিয়ে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্যারিফ কমে যাবে।
প্যানেল