
ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য সখ্যতা, নিজেকে খোলাখুলি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিকল্প নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা এবং গোঁড়ামিপূর্ণ একপাক্ষিক বক্তব্য—এই সব কিছু মিলিয়ে ইরানের প্রবাসী যুবরাজ রেজা পাহলভী নিজের সীমিত জনপ্রিয়তাও হারাচ্ছেন বলে মত বিশ্লেষকদের।
গত ২৩ জুন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির ঠিক আগের দিন প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রেজা পাহলভী যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান যেন তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা না করে "একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শাসনকে জীবনদান" না দেয়। তিনি বলেন, এটি ইরানের “বার্লিন প্রাচীর ধসের মুহূর্ত”—এবং সাধারণ মানুষ যেন রাস্তায় নামে, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী যেন বিদ্রোহ করে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। ইসরায়েলের হামলায় ৯০০’র বেশি নিরীহ ইরানির মৃত্যুর পর অনেক সরকারবিরোধী মানুষও জাতীয় পতাকার চারপাশে একত্রিত হন। তীব্র এক বিদেশি আগ্রাসনের সময় সরকারবিরোধীরা পর্যন্ত সরকারপন্থী অবস্থান নেন। ফলে স্পষ্ট হয়, পাহলভী ভুল পড়েছেন দেশের মুড।
ইরান-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ত্রিটা পার্সি আল জাজিরাকে বলেন, “সাধারণ মানুষের ওপর বোমা পড়ছে, অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হচ্ছে আর তিনি টিভিতে এসে ইসরায়েলের পক্ষ নিচ্ছেন—এতে তিনি নিজের পারিবারিক ভাবমূর্তিও ধ্বংস করে ফেলেছেন।”
রেজা পাহলভীর জনপ্রিয়তা কীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে?
-
তার প্রতি প্রবাসী ইরানিদের একাংশের সমর্থন ছিল মূলত ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতা ও শাহ আমলের প্রতি নস্টালজিয়া থেকে।
-
কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা এবং ইরানে বেসামরিক হতাহতদের প্রতি সহানুভূতির অভাব অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে।
-
তার অফিস আল জাজিরার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি, যা তাকে আরও বিচ্ছিন্ন দেখাচ্ছে।
প্রজন্মভেদে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য
ইয়াসনা (৬৪), যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইরানি মহিলা:
“আমি শাহ আমলের স্মৃতি নিয়ে বড় হয়েছি। তখন আমরা পশ্চিমের ঘনিষ্ঠ ছিলাম। রেজা এখন আমেরিকা, ইউরোপ এমনকি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ—আমরা আবার সেই অবস্থানে ফিরতে চাই।”
ইয়াসমিন (২৯), তার ভাতিজি:
“তিনি কী চাচ্ছেন, তা পরিষ্কার নয়। পরিবারের অনেকেই তাকে শুধু শাহ আমলের প্রতীক হিসেবে সমর্থন করেন, বাস্তব কোনো রাজনৈতিক প্রস্তাবনা নেই তার।”
ভুলে যাওয়া ইতিহাস ও বিকৃত স্মৃতি
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রেজা পাহলভীর জনপ্রিয়তার অংশ বিশেষ তৈরি হয়েছে বিকৃত ইতিহাস চেতনা থেকে। তার দাদা রেজা খান এবং বাবা মোহাম্মদ রেজা পাহলভী—উভয়েই স্বৈরশাসক ছিলেন। সংখ্যালঘুদের দমন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও ধর্মীয় নেতাদের দুর্বল করে দেওয়া তাদের শাসনের চিহ্ন।
তবুও, কিছু মানুষ শাহ আমলের স্থিতিশীলতা ও পশ্চিমমুখী নীতির স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেছেন।
রেজা পাহলভী নিজেকে ইরানের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও, সম্প্রতি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে তার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে অনেকেই। তার বক্তব্য ও অবস্থান সাধারণ ইরানিদের অনুভূতির সঙ্গে না মেলা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব তার রাজনীতির ভবিষ্যতকে সংকটে ফেলেছে।
Jahan