ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মৌসুমি ফলের দামেও স্বস্তি, ঊর্ধ্বমুখী মাছের বাজার

সব ধরনের মুরগির দাম কম স্থিতিশীল গরু ও খাসির মাংস

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:০১, ১৩ জুন ২০২৫

সব ধরনের মুরগির দাম কম স্থিতিশীল গরু ও খাসির মাংস

মুরগির দাম কম স্থিতিশীল গরু ও খাসির মাংস ঊর্ধ্বমুখী মাছের বাজার

এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটিতে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষই গ্রামে ছুটে গেছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে। ফলে ফাঁকা ঢাকায় শাক-সবজির মতো পচনশীল নিত্যপণ্যের চাহিদা কম থাকায় এসবের দাম লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাকরোল, বেগুন, পটোল, ঢেঁড়স ও বরবটির মতো সবজির দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। মূলত চাহিদা কম থাকায় আড়তগুলোতে থাকা সবজিই এখন কম দামে বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করেন বিক্রেতারা। তবে ব্যতিক্রম ছিল মাছের বাজার। সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাকরোল কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি সাইজের গোল বেগুন। ঈদের আগে এর দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। বরবটি ২০-২৫ টাকা, অথচ গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। করল্লা গত সপ্তাহে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল পর্যন্ত এর দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। পটোল কেজিপ্রতি ২০-৩০, ঢেঁড়স ২৫-৩০ এবং মাঝারি সাইজের লাউ ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
কাওরান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মরিয়ম বলেন, ‘এখন ঈদের ছুটি চলছে। মানুষ কম, তাই দামও কম। তাছাড়া গত কয়েকদিনে খুব বেশি বৃষ্টি না হওয়ায় দাম কমার আরেকটা কারণ। বৃষ্টি হলে সবজির দাম বাড়ে।’
বৃষ্টি হলে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ওই সময় সবজি আসে না বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার ভয়ে। তাই তখন আড়তে যে সবজি থাকে সেগুলোই বেশি দামে বিক্রি হয়।’
সবজির বাজারের মতো একই অবস্থা মাংসের বাজারেও। ক্রেতা না থাকায় আগের চেয়ে বেশ কমে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ঈদের আগে ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, পাকিস্তানি কক ২৮০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি মুরগি আগের মতো একই দাম ৬৮০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২শ’ থেকে সাড়ে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে খাসির মাংস প্রতি কেজি ছিল ১৩শ’ টাকা। 
কাওরান বাজার কিচেন মার্কেটের সামনে সিদ্দিক ব্রয়লারের বিক্রেতা সোহাগ মিয়া বলেন, ‘ঈদের সময় মানুষ গরু ও খাসির মাংস বেশি খাওয়ায় মুরগির প্রতি চাহিদা কম থাকে। তাই এই সময় সাধারণত বাজারদর নিচে থাকে। তবে সরকারি ছুটি শেষে রাজধানীতে আবার সবাই ফিরলে দাম বাড়তে পারে।’ অপরদিকে জাহাঙ্গির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘ঈদের কারণে মোকামে গরু আসছে না। তাই মোকামে দাম বেশি। এরপরও খুচরায় গরুর মাংসের দাম আগের মতোই আছে।’
সবজি ও মাংসের বাজারে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও মাছের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। এদিন কাওরান বাজারে প্রতিটি মাঝারি সাইজের রুই মাছ কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ সপ্তাহখানেক আগে এই মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা। অপরদিকে পাঙ্গাস প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। বাগদা চিংড়ি কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যেখানে প্রতি কেজি ছিল ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, সেখানে গতকাল ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে পাবদা ও গলদা চিংড়ি আগের মতোই ৪৫০ টাকা ও ১১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
মাছের এই বাড়তি দামের বিষয়ে কিচেন মার্কেটের মাছপট্টির ২০১ নং দোকানের আব্দুর রহিম বলেন, ‘এখন মাছের আমদানি কম, তাই দাম বাড়তি। তবে ঈদের ছুটির পর আমদানি বাড়লে তখন দাম কমবে।’
এদিকে মৌসুমি ফলের দামও তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এদিন আম রুপালি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা করে। এছাড়া হিমসাগর প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, দেশি লিচু ৩০০ টাকা, চায়না থ্রি ৮০০ টাকা এবং বোম্বে লিচু ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, ঈদের আগে যে লিচুর দাম ছিল ৬০০-৭০০ টাকা গতকাল সেই লিচু কিনেছেন ৩৫০ টাকায়। ঈদের ছুটিতে তাই ফলের বাজারও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ক্রেতাদের।

×