
.
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম, যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বন্দরে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়ায় বন্দর থেকে খালাস হতে পারছে না পণ্য। দিনে দিনে বাড়ছে কন্টেনারের স্তূপ। ইয়ার্ডে স্থান সঙ্কুচিত হতে থাকায় জাহাজ থেকে পণ্য নামতে পারছে না। ফলে বড় ধরনের জাহাজ জটের মুখোমুখি চট্টগ্রাম বন্দর। এতে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, কাস্টমসের কর্মবিরতির প্রভাবে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমেও অচলাবস্থা নেমে আসার উপক্রম। স্বাভাবিক গতিতে পণ্য খালাস হতে না পারায় ইয়ার্ডে জায়গা কমে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা ৫৩ হাজার টিইইউএস। ইয়ার্ডে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকলে তা স্বাভাবিক। এর বেশি কন্টেনার জমা হলে কাজ ব্যাহত হয়। এর কারণ সেখানে যন্ত্রপাতি মুভমেন্টের জন্যও জায়গার প্রয়োজন হয়। কাস্টমসে কর্মবিরতি চলমান থাকায় কন্টেনারের পরিমাণ ৪০ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে। কোনো সমাধান না আসায় কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, কাস্টম হাউসে কর্মবিরতি শুরুর পূর্বে ইয়ার্ডে কন্টেনার ছিল ৩৭ হাজার টিইইউএস। গত বৃহস্পতিবার তা উন্নীত হয় প্রায় ৪৩ হাজারে। শুক্রবার কর্মসূচি না থাকার কারণে কিছু পণ্য খালাস হওয়ায় কন্টেনার নেমে আসে ৪১ হাজারে। শনি ও রবিবার আবারও ছিল কর্মবিরতি। ফলে অবস্থার উন্নতি নেই। শনিবার সকালে বন্দর ইয়ার্ডে ছিল ৪১ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস, যা রবিবার সকালে ৪২ হাজারে ৩১৬ টিইইউএসে পৌঁছে। এদিনও কর্মবিরতি থাকায় সোমবারের চিত্র আরও ভয়াবহ হবে। ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৫৩ হাজার হলেও সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। এর বেশি হলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে সমস্যা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক কন্টেনার খালাস হয় ৪ হাজার টিইইউএস। কিন্তু এখন কাস্টম হাউসে কর্মবিরতির কারণে সে গতি থমকে গেছে। শনিবার খালাস হয়েছে ২ হাজার ৮৫০ টিইইউএস কন্টেনার। খালাস কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকলেও বন্দরে পণ্য নামা কখনও বন্ধ থাকে না। সে কারণেই কন্টেনারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বড় ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে। সামনেই কোরবানির ঈদে লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়বে পুরো দেশ। তখনও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম অর্থাৎ জাহাজ থেকে পণ্য নামতে থাকবে স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু এত পণ্য কোথায় রাখা যাবে- এ নিয়ে চিন্তিত বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার এবং বহির্নোঙ্গরে জাহাজের পরিমাণ বাড়ছে। স্বাভাবিক নিয়মে পণ্য খালাস না হওয়ায় এ অবস্থা। তিনি বলেন, শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিতে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে, সেটিই আশা করি।
সূত্র জানায়, রবিবার বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় থাকা কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা ২০টি ছাড়িয়ে যায়। এ জাহাজগুলোতে বোঝাই ছিল প্রায় ২৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। কাস্টমসে কলম বিরতি চলমান থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
পোশাক শিল্প মালিকরা পড়েছেন বেশি শঙ্কার মধ্যে। কারণ, মার্কিন সরকারের আরোপিত উচ্চ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত আছে। তারা চাচ্ছেন এই সময়ের মধ্যে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানির সুযোগটি গ্রহণ করতে। চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরে এ অচলাবস্থা তাদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একাধিক রপ্তানিকারক বলেন, সামনেই ঈদুল আযহার লম্বা ছুটি। ফলে হাতে সময় খুবই কম। তাছাড়া ঈদের ছুটিতেও বন্দরে জাহাজ আসা স্বাভাবিক থাকবে। জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর কাজও সচল থাকে প্রতিবছরই। কিন্তু এবার কী হবে? ইয়ার্ডে যদি স্থান সঙ্কুলান না হয় তাহলে বন্দরে স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় এনবিআরের সমস্যার দ্রুত নিরসন কামনা করছেন তারা।
কাস্টমসে অচলাবস্থার প্রভাব পড়েছে সিএন্ডএফ এজেন্টস, ফ্রেইটফরোয়ার্ডিং, বেসরকারি কন্টেনার ডিপোসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে। পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেক্টরেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। অতি দ্রুত অচলাবস্থার সমাধান হোক, এই প্রত্যাশা সকলের।
প্যানেল