
আলী রীয়াজ
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম ধাপের সংলাপ শেষে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রথম ধাপের সংলাপে ভিন্নমত নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।
সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন, আলী রীয়াজ। সিপিবির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম ধাপের সংলাপ শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে এ কমিশন। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। ২০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সংলাপে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়। সিপিবির সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আশা করছি যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করতে পারব। প্রথম পর্যায়ের সংলাপের সমাপ্তি টানব এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা খুব শীঘ্রই শুরু করতে পারব।’
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম ধাপের আলোচনার অগ্রগতি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘গত দুই মাসের আলোচনায় অনেক বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছি। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে সমস্ত মতামত দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে দিয়ে একটি জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করতে পারব বলে আমাদের দৃঢ় আশা।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রত্যেকে অংশীদার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ অংশীদার, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর ভূমিকা আছে। আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি- সিবিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষসহ সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা এবং লুনা নূর।
জনগণ বুঝতে চায়, ভোট দিতে পারবে কি-না- প্রিন্স ॥ বৈঠকে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। জনগণ বুঝতে চায়, তারা ঠিকমতো ভোট দিতে পারবে কি-না। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার আছে কি-না। এখানে প্রশাসনিক কোনো কারসাজি হবে কি-না। কিংবা কোনো সাম্প্রদায়িক-আঞ্চলিক প্রচার-প্রচারণা ভোট থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানো হবে কি-না। পুরানো ভয়ের রাজত্ব কায়েম হবে কি-না।’
সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ছাড়াও স্বাস্থ্য, নারী বিষয়ক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবগুলো আলোচনায় নিয়ে আসা গেলে, আাগমীতে জনস্বার্থের বিষয়গুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাবে, মানুষ ভাবতে পারবে এবং মানুষের চিন্তাকে সামনে এনে আমাদের সম্পৃক্ত করতে পারবে।