ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক

সংস্কারে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি জামায়াত

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ১৮ মে ২০২৫

সংস্কারে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি জামায়াত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রবিবার ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্ধিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আর জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি আছে। উল্লেখ করে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী সংস্কারকে দলীয় নয়, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ বলে মনে করছে। তাই জামায়াত সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি আছে।
রবিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্ধিত আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তারা এমন মন্তব্য করেন। বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ভিন্নমত নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার বিষয়টি তুলে ধরেন। আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির পুনর্বিবেচনার ভিত্তিতে অনেক জায়গায় মত পরিবর্তন করে ঐকমত্য পোষণের কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব যোবায়েরসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন সাইফুল আলম খান মিলন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির ও সরকার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সকলের কল্যাণে যা প্রয়োজন সে বিষয়ে ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে একমত হতে চাই আমরা। দেশ গঠনের সব ইতিবাচক সিদ্ধান্তে একমত, দল নয় দেশ ও জাতির স্বার্থে সংস্কারও চাই আমরা। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন যে একেবারে সঠিক ও সুষ্ঠু হবে, এরকম কোনো পরিস্থিতি এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করব কিংবা ঐকমত্য হয়নি কিন্তু পরিবর্তনের জন্য সেসব গুরুত্বপূর্ণ, এসব ইস্যু করে কি পদ্ধতিতে এটার আইনগত ভিত্তি দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমরা গণভোট চাই বলেছি। গণভোটের মাধ্যমে আমরা জুলাইয়ের সনদ হোক কিংবা জাতীয় সনদ হোক, এর বাইরেও যদি কিছু থাকে সেগুলো ইনক্লুড করে গণভোট চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা দু-এক দিনের মধ্যে শেষ করে শীঘ্রই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবে কমিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব বিষয়ে মতভিন্নতা থাকবে, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সে সব বিষয়ে ঐকমত্যের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অনেক রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যাদের আত্মদানে এই সুযোগ  তৈরি হয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের দায় আছে। এ দায় শুধু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয় বরং বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তি, সুশীল সমাজ এবং সামাজিক শক্তিশালীগুলোরও এ দায় রয়েছে।’
গত ২০ মার্চ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর ওপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সে পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ এপ্রিল দলটির সঙ্গে আলোচনায় বসে কমিশন। সেদিনের অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে রবিবার বর্ধিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, দুর্নীতি রোধে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দুদক অনেকটা দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর নজরদারির জন্য জন্য ওয়াচডগের মতো কাজ করবে এমন একটা কাউন্সিল গঠনে প্রস্তাব করেছি। সেখানে একটা টাস্কফোর্স থাকবে। সেই টাস্কফোর্স দুর্নীতির ওপর তদন্ত করবে এবং যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করবে। তারা প্রাথমিকভাবে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে পারবে। যদি সে চাকরিজীবী হয় তবে তাকে সাসপেন্ড করা। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপরেই যেন ওয়াচডগের মতো কাউন্সিল বা টাস্কফোর্স থাকে। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছ। এ ব্যাপারে কমিশনও সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে।
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা আরেকটি বিষয়ে প্রস্তাব করেছি সেটা হচ্ছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। আমাদের দেশকে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। একজনের হাতে যেন সব ধরনের ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়। আমরা প্রস্তাব করেছি যে, যে কোনো একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, আবার দলের প্রধান তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, এর আগের আলোচনায় আমরা বেশ কিছু বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আজ আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে যে একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। অর্থাৎ দশ বছরের বেশি একজন ব্যক্তি তার পুরো জীবনে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এতে করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে। তিনি এমন কিছু হয়তো করবেন না যা তাকে নিগৃহীত বা জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যে নির্বাচন কমিশন ছিল তার মূল দায়িত্ব ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু তারা সেটা করেনি বা করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের ত্রুটি-বিচ্যুতি বা তাদের ভুল-ভ্রান্তির জন্য খুব বেশি শাস্তির কোনো সিস্টেম ছিল না।

 

প্যানেল

আরো পড়ুন  

×