
ছবি: সংগৃহীত
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল সাম্প্রতিক এক আলোচনায় বলেন, নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠলেই বর্তমান সরকার যেন অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, অতীতেও দেখা গেছে।
তিনি একটি মজার উপমা টেনে বলেন, “পাকিস্তানে একসময় সামরিক শাসক ছিলেন জিয়াউল হক। উনি ছিলেন একজন আর্মি অফিসার, ছোট ছোট চুল রাখতেন। এক নাপিত নিয়মিত তার চুল কাটতে যেতেন। একদিন সেই নাপিত জিজ্ঞেস করলো, ‘স্যার, নির্বাচন কবে দেবেন?’ জিয়াউল হক কিছু না বললেও আশপাশে থাকা লোকজন শুনলো জবাব, ‘তুমি প্রতিদিন এই প্রশ্ন করো কেন?’ তখন নাপিত বলেছিল, ‘স্যার, আপনি যখন বলেন নির্বাচন আসছে, তখন আপনার চুল খাড়া হয়ে যায়, আমার কাটতে সুবিধা হয়।’”
এই ঘটনাটি তুলে ধরে মাসুদ কামাল বলেন, এখনকার পরিস্থিতিও অনেকটা তেমনই। বর্তমান সরকার ও তার উপদেষ্টাদের মধ্যে এমন একটি মনোভাব লক্ষ্য করা যায় যে, যতদিন থাকা যায়, ততদিনই থাকা উচিত। যেন প্রতিটি মুহূর্তেই কিছুটা আরাম, কিছুটা সুযোগ নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের কৌশল নিচ্ছে। আলোচনার কেন্দ্রে যেন নির্বাচন না থাকে, তাই নানা ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে। যেমন দুই-আড়াই দিনের নাটক—যা সম্পূর্ণভাবে সরকার প্রযোজিত এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ পরিচালিত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার চাইছে বিরোধীদের আন্দোলনকে পাতানো আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে দেখাতে চায় যে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা তাদের নেই। অথচ মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার যেন নিজেই নাটকের কাহিনী সাজাচ্ছে, নির্দেশনা দিচ্ছে এবং অভিনয়ও করছে।
মাসুদ কামাল বলেন, “এই সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল অবিলম্বে একটি নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে তারা নির্বাচনের আলোচনাকেই ধামাচাপা দিতে চায়। কারণ একবার আলোচনাটা শুরু হলে জনগণের চাপ তৈরি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উঠে আসতো, তখন তা দমন করতে হঠাৎ করে নতুন কোনো ঘটনা তৈরি করা হতো। এখনো তা-ই হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘ঘটনার ফলোআপ কোথায়? খালেদা জিয়া দেশে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় পৌঁছাতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছিল। এত লোক তাকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিল, সেটা নিয়ে কি কোনো ফলোআপ রিপোর্ট হয়েছে?’"
তিনি বলেন, এই ইস্যুগুলোর ফলোআপ হলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হতো এবং সরকারকে নির্বাচন দিতে চাপ তৈরি হতো। তাই এগুলোকে চাপা দিতে অন্য ইস্যু তুলে ধরা হচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা আগে দেখেছি, কেউ যদি গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন বলা হতো উন্নয়নের কথা। এখন বলা হয় সংস্কারের কথা। কিন্তু এই সংস্কার করবে কে? আলী রিয়াজ বা বজ মজুমদাররা? তাদের দিয়ে কি আদৌ জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান হবে?”
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=oI6xJypv4PU
এম.কে.