ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশে কেন ছড়াচ্ছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস? শিশু ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঝুঁকি বেশি

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৪ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:০৪, ৪ মে ২০২৫

বাংলাদেশে কেন ছড়াচ্ছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস? শিশু ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঝুঁকি বেশি

ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিস বা খোসপাচড়া ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। সাধারণত গরমকালে স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিলেও, এখন সারা বছরজুড়েই রোগটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কী এই স্ক্যাবিস?

স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামক একধরনের পরজীবী উকুন দ্বারা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত তীব্র চুলকানি ও গুটি গুটি র‍্যাশের মাধ্যমে শরীরে প্রকাশ পায়। কবজি, আঙুলের ফাঁক, কোমর ও শরীরের অন্যান্য অংশে এসব উপসর্গ দেখা যায়। বিশেষ করে রাতে চুলকানির তীব্রতা বেড়ে যায়।

কীভাবে ছড়ায় এই রোগ?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই রোগ সহজেই একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, চাদর, তোয়ালে, গামছা বা বিছানার চাদরের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৫০ লাখ মানুষ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রথমবার স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঘটলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উপসর্গ দেখা দেয়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

বাংলাদেশে স্ক্যাবিস চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পারমেথ্রিন ক্রিম। এটি গলা থেকে পা পর্যন্ত মেখে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রেখে দিতে হয়, এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হয়। সাত দিন পর একইভাবে আবার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এছাড়া পোমেট্রিন ও সালফার ক্রিম ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

সঠিক চিকিৎসা না হলে চামড়ায় ঘা, এমনকি কিডনি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

টিকা নেই, সচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধ

স্ক্যাবিসের কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—

  • সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

  • ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র আলাদা রাখা

চিকিৎসকরা আরও জানান, স্ক্যাবিসের একটি জটিল রূপ হলো নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস বা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস, যা সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তি, যেমন এইচআইভি আক্রান্ত বা দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। এই ধরনের স্ক্যাবিসে চামড়ায় স্কেলিং হয় এবং পুরো চামড়ার স্তর আক্রান্ত হতে পারে।

স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে হলেও প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

নুসরাত

×