
নাব্য সংকটের কারণে অনেকস্থানেই বন্ধ হয়ে গেছে নদী তীরের ঘাট
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর নাব্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দু’নদের বুক জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর ও ডুবোচর। নদের বাঁকে ডুবন্ত চরে আটকে যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আটকে যাওয়া নৌকা চর থেকে ছাড়াতেও সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। প্রতিবছর খনন না করার কারণে নদ-নদীতে এই নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে গাইবান্ধার দুর্গম চরের বাসিন্দাদের।
উত্তরাঞ্চলের নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা। জেলার চারটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ঘাঘটসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী। এসব নদ-নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। এতে অনেক রুটে লঞ্চ ও নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। এজন্য অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করছে নৌযান। এতে নৌপথে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গাইবান্ধার নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নৌ চ্যানেল রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। তবে ব্রহ্মপুত্র নৌ চ্যানেলে নাব্য সংকটের কারণে অনেক স্থানেই বন্ধ হয়ে গেছে নদী তীরের ঘাট এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পানি কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্রহ্মপুত্রের ওপারে জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুর উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসী নৌঘাট। ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে ছিল অনেক ছোট-বড় নদ-নদীর সংযোগ। ফলে খুব সহজেই নানা এলাকার মালবাহী নৌযান এসে ভিড়ত এসব ঘাটে।
শীতের শুরু থেকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শত শত বালুচর জেগে ওঠায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশকিছু নৌরুট। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ফুলছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌরুট ফুলছড়ি-বালাসী, তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ ঘাট, গজারিয়া-গলনা, হাজিরহাট, সিংড়িয়া-ঝানঝাইর, গুনভরি-কালাসোনা, গজারিয়া-ফুলছড়িতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নৌপথ দিয়ে চরাঞ্চলে উৎপাদিত বাদাম, ভুট্টা, পাট, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়। জামালপুরের ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসী নৌঘাট। ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে ছিল অনেক ছোট-বড় নদ-নদীর সংযোগ। ফলে খুব সহজেই মালবাহী নৌযান এসে ভিড়ত ঘাটে।
শীতের শুরু থেকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বালুচর জেগে ওঠায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশকিছু নৌপথ। বেশ কয়েকটি নৌপথ বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পণ্য আনা-নেওয়া ও যাত্রী পারাপারে। ঘোরা পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু নৌকা চলাচল করলেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। এতে তেল খরচ ও সময় বেশি লাগছে। এছাড়া প্রায় একই অবস্থা দেখা দিয়েছে যমুনা নদীতেও। এর ফলে বিভিন্ন রুটে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদীর সংশ্লিষ্ট অংশে ড্রেজিং করা হলেও নাব্যতার উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও নৌকার মাঝিরা। তলদেশে পলি জমায় কমে গেছে নদীর পানি ধারণক্ষমতা। বর্ষায় পানি বাড়লে ডুবে যায় চর, আর গ্রীষ্মে পড়ে বালুর স্তর। সেখানে বছরজুড়ে হচ্ছে চাষাবাদ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) আব্দুস সবুর খান বলেন, ‘আপাতত কোনো বাজেট নেই। তাই ওই এলাকায় ড্রেজিংয়ের জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, নদের তলদেশে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রস্থ ঠেকেছে ১৬-১৮ কিলোমিটারে। এর কারণ হচ্ছে নদে শত শত চর-ডুবোচর জেগে ওঠা। এতে অসংখ্য চ্যানেল সৃষ্টি হয়েছে। নদীর নাব্য সংকটে নৌরুটগুলো বন্ধ। আমরা নদী প্রতিরক্ষামূলক কাজটি করে থাকি। ড্রেজিংয়ের কাজটি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।