ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

ইঙ্গিত শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের

আগামী বছরই নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেখা যাবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আগামী বছরই নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেখা যাবে

.

দুটি অনুষ্ঠানে শনিবার যোগ দেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই গণতান্ত্রিক শাসনের রূপান্তর ও রাজনৈতিক সরকারের বিষয়ে নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করেছেন তিনি। এদিন সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন কনফারেন্সে আসছে বছরই রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখব বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা খুব স্বল্পকালীন সরকার, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী বছরই হয়তো রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার দেখব। একই দিন দুপুরে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সমাবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। দুটি অনুষ্ঠানেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা এই বক্তব্যকে ব্যক্তিগত অভিমত বলে উল্লেখ করেন। তবে তার এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখায় যোগাযোগ করা হলেও এটিকে উপদেষ্টার বক্তব্য বলে জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও পরবর্তী নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেবেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান।
এই মুহূর্তে দেশের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও আয়-বৈষম্য উল্লেখ করে সকালে সংবাদ সম্মেলনে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বৈষম্য দূর করতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার, যেখান থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে উন্নত দেশ থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আলোচনা চলমান। অনেক দেশই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। অনুষ্ঠানে মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বাঁচতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল।
তিনি বলেন, মানুষের টাকা ব্যাংকে আছে, কিন্তু ব্যাংকের সব টাকা বাইরে চলে গেছে। সেই টাকা তো মানুষের। এখন ব্যাংকগুলোর এই মানুষের টাকার জন্য রিসোর্স দরকার। তিনি বলেন, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শিটে এখন দেখা যাচ্ছে যে, অনেক টাকা আছে, কিন্তু আসলে দেশের ভেতরে কোনো রিসোর্স নেই। তাহলে কোথা থেকে এই টাকা আসবে- প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা আরও বলেন, তার মধ্যে যদি এখন বলা হয় যে, আমাদের আরও ইক্যুয়াল সোসাইটির দিকে যেতে হবে যার অর্থ জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও রিসোর্স বিল্ড করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের চরের জমি দখল হয়ে যায়। হাওর অঞ্চলে অনেক জলাভূমি পরে আছে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা দরকার। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা এগুলো দখল করে নিয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে এটা যদি শক্তিশালী থাকত অর্গানাইজেশনাল ডেমোক্রেসি, গ্রাসরুট ডেমোক্রেসি থাকত, তা হলে এখান থেকে অনেক রিসোর্স আসত। এটা যদি গরিবদের কাছে যেত, তা হলে অনেক লাভ হতো।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগেুলোকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক হওয়া মানে শুধু চিপ লেবার, লো-টেকনোলজি না। এর বাইরে টেকনোলজিক্যাল ইনোভেশন এবং হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট দরকার। সেখানে ভূমিকা রাখবে শিক্ষা। দেশের শিক্ষা যে অবস্থায় আছে, এটা দিয়ে, এই মানবসম্পদ দিয়ে একদমই হবে। পূর্ব এশিয়ায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নেয়, আর প্রায় ৭০ শতাংশ ভোকেশনাল শিক্ষার দিকে যায়। আমাদের দেশে ২০ শতাংশ যায় ভোকেশনাল শিক্ষায়। তাদের আবার যারা পড়াবে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি, আছে মাত্র ২০ শতাংশ।
এই অনুষ্ঠানের পর দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ যোগ দেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থান তখনই সফল হবে, যদি আমরা একটি সুন্দর আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে রূপান্তরিত হতে পারি।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং এ দেশের সমগ্র শাসন ব্যবস্থায় মেধাতন্ত্রকে বহু বছর ধরে সবচেয়ে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই সময়ে আমরা আমাদের সাধারণ নৈতিকতার মানকেও অধঃপতিত করেছি।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে আপনাদের বিশেষ অভিনন্দন প্রাপ্য। কারণ আপনারা সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ও সমাবর্তনের সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক ও ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন। পরে শিক্ষা উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী সমাবর্তন কার্যক্রম শুরু করেন।
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। আগামী প্রজন্মকে আশা, সম্মান এবং সাম্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। সমাবর্তনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম, স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল ইসলাম, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন এবং স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক দীপক কুমার মিত্র।

×