.
বকেয়ার দাবিতে এক ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেড (এপিজেএল)। ফলে ওই ইউনিট থেকে দেশের জাতীয় গ্রিডে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ। একই সময়ে কয়লার অভাবে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটই। কিন্তু তবু চাহিদার তুলনায় সারাদেশে সোমবার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সোমবারে উৎপাদিত হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে পুরো মৌসুমে বিদ্যুৎ পরস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। পল্লী অঞ্চলের যেসব জায়গায় বর্তমানে লোডশেডিং হচ্ছে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে তাও থাকবে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
পিডিবি’র কাছে ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেডের (এপিজেএল) পাওনা ৮৪৬ মিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার মাঝখানে কিছু পরিশোধ করলেও তা মূল পাওনার তুলনায় খুবই স্বল্প দাবি করে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে কোম্পানিটি। পরে সে দেশের একটি গণমাধ্যমের এক খবরে বলা হয় ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া আদায় না হলে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে কোম্পানিটি। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় আদানির বাংলাদেশের মুখপাত্র এটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে জানান, এমন কোনো নির্দেশনা আদানি কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। ফলে ওই কেন্দ্রের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিকই থাকছে। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে পাওয়া যাবে না মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ। বকেয়া জটিলতা না কাটায় উৎপাদন কমিয়েছে রামপালও তারপরও অন্যান্য কেন্দ্র থেকে চাহিদার থেকে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে জানিয়ে পিডিবি’র মুখপাত্র শামীম হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, এখন তাপমাত্রা অনেকটা কমে এসেছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমছে। বড় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসলেও তাই এখনো তেমন প্রভাব পড়েনি। আশা করছি পড়বেও না।
রবিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে আদানি পাওয়ার ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশে আসছিল। বকেয়া না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের সময়সীমাও বেঁধে দেয় কোম্পানিটি। চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার কথা পিডিবির। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপরাগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পিডিবির কর্মকর্তারা পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদানি পাওয়ার তাতে সম্মতি দেয়নি।
তবে পিডিবি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এর আগের বকেয়ার একটি অংশ পরিশোধ করা হয়েছিল। তবে জুলাই থেকে আগের মাসগুলোর চেয়ে বেশি চার্জ নিচ্ছে আদানি। পিডিবি সপ্তাহে ১৭ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে, যেখানে চার্জ হচ্ছে ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এ কারণেই বকেয়া বিল আবার বেড়েছে। এ ছাড়া কৃষি ব্যাংককে গত সপ্তাহের পেমেন্ট জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধে ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়ে রেখেছে পিডিবি। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারছে না। আর আদানি কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিলেও তারা সেটি এখন পর্যন্ত আমলে নিচ্ছে না পিডিবি। প্রয়োজনে চুক্তি সংশোধন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
কয়লার অভাবে বন্ধ রয়েছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদনই। সব প্রক্রিয়া শেষ করে নভেম্বরের শেষে কয়লা আমদানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছে পিডিবি। কয়লা আসার পরই আবার শুরু হবে উৎপাদন। বকেয়া জটিলতায় উৎপাদন কমেছে রামপাল ও বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রেও। কয়লার মজুত কমে আসায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বাঁশখালি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে গড়ে উৎপাদন ১২২৪ মেগাওয়াট। কয়লার মজুত না থাকায় এর দুই ইউনিটেই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।