ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

জোবরা গ্রাম থেকে সরকারপ্রধান, ইউনূসের লড়াই সর্বক্ষেত্রে 

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ৯ আগস্ট ২০২৪

জোবরা গ্রাম থেকে সরকারপ্রধান, ইউনূসের লড়াই সর্বক্ষেত্রে 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রাম থেকে।

ক্ষুদ্রঋণ মডেলটি এখানেই বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি। এ লড়াই তাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। ২০০৬ সালে এ পুরস্কার পাওয়ার প্রায় দেড় যুগের মাথায় দেশের ক্রান্তিকালে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেলেন তিনি। 

জোবরায় ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামে তেভাগা আন্দোলনেরও সূচনা করেছিলেন। ড. ইউনূস সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘ইউনূস সাহেবের হাতেই ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চাকরি হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে পিএইচডি করতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দুই বছর একসঙ্গে চাকরিও করেছিলাম। ১৯৭৬ সালে তিনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে জোবরা গ্রামে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন।’

ড. ইউনূসের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করা প্রাণিবিজ্ঞানী ড. শফিক হায়দার চৌধুরী জানান, ‘ড. ইউনূস আমার দুই বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। আমি প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হলেও তেভাগা আন্দোলনে ওনার সঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে খালখনন কর্মসূচিতে ছিলাম। এখানকার কৃষকদের মধ্যেই তিনি তেভাগা প্রথম শুরু করেছিলেন।’

ড. ইউনূস সরকারপ্রধান হওয়ায় চট্টগ্রামের জন্য গর্বের বিষয় উল্লেখ করে ড. শফিক হায়দার চৌধুরী জানান, অবশ্যই চট্টগ্রামের জন্য তা বিরাট প্রাপ্তি। তবে এখন আর আঞ্চলিকতা নিয়ে ভাববার সময় কই, তিনি পুরো দেশ নিয়ে ভাববেন।

আর চট্টগ্রামের জন্য হয়তো পৃথক পরিকল্পনা থাকলেও থাকতে পারে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নজুমিয়া হাটের কথা অনেকেই জানেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) যাওয়ার আগেই পড়ে নজুমিয়া হাট। সেই নজুমিয়া হাট নামকরণের নজুমিয়া ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দাদা। এখানকার বাথুয়া গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন এবং থাকতেন নগরীর বকশীরহাট এলাকায়। এসএসসি পাসের পর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ১৯৫৭ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পড়াশোনা শেষে তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক্স-এ যোগ দেন গবেষণা সহকারী হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। বিদেশে লেখাপড়া ও শিক্ষকতা করে ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে তিনি ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে যা সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে।

‘ক্ষুদ্রঋণের’ ধারণা নিয়ে ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের জন্ম হয় যারা নাম ‘গ্রামীণ ব্যাংক’। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচজনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং এ ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে এই গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কার অর্জন করায় সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ সবার আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকে দলটি। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে নানা অপবাদ, মামলা, হয়রানির সঙ্গে লড়াই চলছিল ড. ইউনূসের।

বারাত

×