ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

চার কোটি টাকা আদায় করে মতিউর সিন্ডিকেট কোষাগারে জমা দেয় দেড় কোটি 

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৩ জুন ২০২৪

চার কোটি টাকা আদায় করে মতিউর সিন্ডিকেট কোষাগারে জমা দেয় দেড় কোটি 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান। ফাইল ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। 

তার বিরুদ্ধে অবৈধ আয় এবং রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করে এনবিআরে আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদনে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের কর ফাইল এবং তাদের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব পরিশাধের তথ্য খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। এনবিআরে করা আবেদনের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা সব তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।   

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের কাছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেনি। 

মতিউর রহমানকে আবেদনে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে,  চাকরিজীবনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন কৌশলে দুর্নীতি করে আসছেন। কাস্টমসের চাকরি যেন তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। এই চেরাগ ঘষলেই বের হয়ে এসেছে টাকা। তার সম্পদের বাস্তবতা দেখে এমনটাই মনে হবে যে কারও। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর শুরু হয় তার অবৈধ অর্থ আয়। কয়েক বছরেই কয়েকটি ব্যাংকে কিনেছেন কোটি কোটি টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র। মোটা অঙ্কের টাকায় বসুন্ধরায় কিনলেন ফ্ল্যাট ও জমি। মাসে ব্যবহার করেন লাখ টাকার পারফিউম। প্রতি মাসে পরিবর্তন করেন আইফোন। মূলত ব্যবসায়ীদের হয়রানি আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজম্যান’ হিসেবে কাজ করেই তিনি এই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর সম্পদের মালিক হয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কাস্টমসে চাকরি হওয়ার আগেও যে ব্যক্তি পরিবার নিয়ে মোটামুটিভাবে চলতেন, চাকরি হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে যান।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মতিউর রহমান সুন্দরভাবে কথা বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন জয় করে তাদের দিয়ে ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করাতেন। অর্থাৎ রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাই তার শাগরেদ ছিলেন। টাকার বিনিময়ে রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তার জন্য চুক্তি করতেন তার শাগরেদরা। পরে চুক্তি অনুযায়ী, টাকা নিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটা অংশ দিতেন। বাকি অংশ তিনি রেখে দিতেন। মতিউর রহমান তার অধীনস্থদের দিয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। 

কোন ফাইলে কীভাবে কত টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া যায়, কীভাবে কাদের ম্যানেজ করতে হয়- সবকিছুই তারা সুন্দরভাবে করতেন। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মতিউর। তার কর্মচারীরা ফাইল আটকে রাখতেন। তারা ঘুষ নিতেন। টাকা না পেলেই করতেন হয়রানি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা আমদানি পণ্যের সাতটি চালানে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেন বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়োগ করা সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি। ওই সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন ড. মতিউর রহমান। এ সময়ে শুল্ক কর ও জরিমানাসহ সাড়ে চার কোটি টাকা আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেন দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা হাতিয়ে নেয় মতিউর রহমানের সিন্ডিকেট। এভাবে কয়েকটি অভিযান চালিয়ে মতিউর রহমান কাস্টমসের হিরো বনে যান। কিন্তু গোপনে তার বানানো সিন্ডিকেট চলমান রাখেন। এভাবেই তিনি হয়ে যান শতকোটি টাকার মালিক। 

বানিয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি, কিনেছেন ফ্ল্যাট, রয়েছে দামি দামি গাড়ি, পরিবারের নামে রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ। তিনি যে বেতন পান সেই বেতন দিয়ে তার পরিবারের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। 

রাজধানী বিভিন্ন স্থানে তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট। আছে দামি দামি গাড়ি। মতিউর রহমান চেয়ারম্যান, সচিব, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়েও অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসআর

×