ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এনইসি সভায় আজ এডিপি অনুমোদন

আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬৫হাজার কোটি টাকার

কাওসার রহমান

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ১৫ মে ২০২৪

আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬৫হাজার কোটি টাকার

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিবত্য এই সভায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন করা হবে। 
এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার খুব বড় হচ্ছে না। গত অর্থবছরের তুলনায় মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা বেশি থাকছে। মূলত আইএমএফের পরামর্শে এবং স্থানীয় সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে এবার উচ্চাভিলাষী এডিপিতে যাচ্ছে না সরকার। বরং স্থানীয় সম্পদের অপ্রতুলতায় বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বেশি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী এডিপিতে মোট বরাদ্দের বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এডিপিতে এক অর্থবছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে গত ১৪ মার্চ নির্দেশনা দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে এডিপির জন্য মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৪০২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়।

এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ-অনুদান ৯১ হাজার ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। পরে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপির আকার দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়। 
সে মোতাবেক গত ৭ মে কমিশন সভায় নতুন অর্থবছরের খসড়া এডিপি চূড়ান্ত করা হয়। আগামী অর্থবছরের এডিপির মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের টার্গেট এক লাখ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৭৪ শতংশ। আর স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নসহ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপির মোট আকার দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
এবারের এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আবাসন এবং কমিউনিটি সুবিধাবলির মতো আগে অগ্রাধিকার পাওয়া খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিলে বরাদ্দ কমেছে এবং বৈদেশিক ঋণের অংশ বেড়েছে।

অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সবোর্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাদের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এবারের এডিবির বৈশিষ্ট হলো- প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের অর্থায়ন কমছে, অন্যদিকে বিদেশী অর্থায়ন বাড়ছে।

নতুন এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ধরা হয়েছে মোট বরাদ্দের ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এটি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির এই বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশের বিপরীত। অর্থাৎ সরকারি তহবিল দুই শতাংশ কমছে এবং বৈদেশিক অর্থায়ন দুই শতাংশ বাড়ছে। 
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে রাজস্ব আহরণ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সরকারি তহবিলের তুলনায় বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে তা কমিয়ে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত এডিপিতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ছয় লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একইভাবে, স্বাস্থ্য খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে চার হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাত ॥ প্রস্তাবিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ এবং পদ্মা রেল সংযোগের মতো প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং মাতারবাড়ি ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা খাত তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে প্রায় ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এর পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কৃষি খাত ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাত ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ পেয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা পেয়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত পেয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
নতুন এডিপি যত উন্নয়ন প্রকল্প ॥  আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১৪৯টি, কারিগরি সহায়তার ৮৬টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২৩টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে ১ হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিন্তু অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধানে অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পের বরাদ্দ ॥ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৯টি এবং সরকারের নিজস্ব ও প্রকল্প সাহায্যের পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের অংশীদারিত্ব রয়েছে এমন ১০২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে মোট ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

×