ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

চার কারণে মূল্যস্ফীতি

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৩ অক্টোবর ২০২৩

চার কারণে মূল্যস্ফীতি

বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতির দিকে

বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতির দিকে। গত আগস্টে খাদ্যপণ্যের দাম কমার রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম যখন দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, তখন দেশের বাজারে তার উল্টো চিত্র। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও চড়া, তা ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। খাদ্য খাতে এই মূল্যস্ফীতি গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত বছরের মার্চ থেকেই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা আর ঠেকানো যায়নি এবং সেটাই এখন এত বড় আকার ধারণ করেছে। তারা বলছেন, মুনাফার বড় অংশই লুটে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী বা কথিত সিন্ডিকেট।

এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দেশে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংকও মোটা দাগে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির  ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়ায় আমদানি কম হওয়া। এসব কারণেই বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
জানা গেছে,  কোভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট সরবরাহ সংকটের কারণে ২০২০ সালের পর থেকেই হঠাৎ বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। এর পর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে খাদ্যপণ্যের বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে খাদ্যপণ্যের দাম। গত আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤েœ নেমেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ্যের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘ফুড প্রাইস ইনডেক্স’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্য সূচক ছিল ৯৮ দশমিক ১ পয়েন্ট। সেটা ২০২১ সালে বেড়ে হয় ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তা আরও বেড়ে ১৪৩ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়।

যদিও চলতি বছরের আগস্ট মাসে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্য সূচক এসে দাঁড়ায় ১২১ দশমিক ৪ পয়েন্ট। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এ ছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে ১৩৭.৬ পয়েন্ট, সেপ্টেম্বরে ১৩৬ পয়েন্ট, অক্টোবরে ১৩৫.৪ পয়েন্ট, নভেম্বরে ১৩৪.৭ পয়েন্ট এবং ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্য সূচক ছিল ১৩১.৮ পয়েন্ট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ সূচক ছিল ১৩০.২ পয়েন্ট, ফেব্রুয়ারিতে ১২৯.৮ পয়েন্ট, মার্চে ১২৭ পয়েন্ট, এপ্রিলে ১২৭.৭ পয়েন্ট, মে মাসে ১২৪.১ পয়েন্ট, জুনে ১২২.৭ পয়েন্ট এবং জুলাই মাসে ১২৪ পয়েন্ট ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে খাদ্যমূল্য সূচক কমেছে ১৬ দশমিক ২ পয়েন্ট। দুগ্ধজাত পণ্য, তেলবীজ, মাংস, দানাজাতীয় খাদ্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের খাবারের দামই কমেছে। যদিও চাল রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধের কারণে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছে।

আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার শস্যচুক্তি বাতিল হলেও গম বা ভুট্টার বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত বছর মূল্যস্ফীতির কারণে কঠিন সময় পার করেছে ইউরোপ। এক বছর পর সেই ইউরোপে মূল্যস্ফীতির হার দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৬৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, সংকটকালে প্রায় সব দেশেই ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে বাজারে অর্থ কম যায়। টাকা মানুষের কাছে গেলে তারা তখন তা খরচ করতে থাকবে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেয়। সেখানে একটা লাগাম টেনে ধরতে হয়। কিন্তু আমরা সেটি করিনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, একক কোনো পদক্ষেপ নিয়ে কিন্তু সমস্যার সমাধান করা যায় না। বিশেষ করে বহুমুখী সমস্যার ক্ষেত্রে। শ্রীলঙ্কা আর্থিকনীতি ব্যবহার করার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক ও সরকারি ব্যয় কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম তো কমেইনি, উল্টো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৩৭ শতাংশে। এটি দেশে গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৩৭ শতাংশ হওয়ার মানে হলো ২০২২ সালে দেশে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো এ বছরের সেপ্টেম্বরে সেই একই পণ্য কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১১২ টাকা ৩৭ পয়সা। এর আগে দেশে পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টিকে ব্যবহার করা হলেও এখন সেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে গেলেও তার প্রতিফলন কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে দেখা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বরং প্রতিনিয়ত দেশে বেড়ে চলেছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারে সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্বাবাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমে না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর এক্ষেত্রে তদারকির অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী যেখানে পণ্য উৎপাদন হয়, সেখানে দাম কম থাকে।

যেখানে সরবরাহ করা হয়, সেখানে পরিবহন ব্যয়, হাতবদলসহ নানা কারণে পণ্যের দাম বেশি থাকে। বাংলাদেশে এ নিয়ম অচল। এখানে উৎপাদনের স্থান গ্রামে দাম বেশি আর সরবরাহ স্থান শহরে কম। এটি উদ্ভট বিষয়। এর মানে এই নয় যে, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশি পাচ্ছেন। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অর্থাৎ, মুনাফার বড় অংশই লুটে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী বা কথিত সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দেশে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। 
গত বছরের আগস্টে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেন লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

পরে অবশ্য প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে গত সপ্তাহে পাকিস্তানে তেলের দাম কমিয়েছে দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার।  যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ মেনে সংস্থাটির দেওয়া ফর্মুলা অনুযায়ী চলতি মাস থেকে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে একটি নতুন ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়া কার্যকর করার কথা রয়েছে। নতুন এই ফর্মুলা অনুযায়ী শুরুতে তিন মাস পর পর জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করবে সরকার। ভবিষ্যতে জ্বালানির মূল্য প্রতি মাসে সমন্বয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি এক আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসে ভর্তুকি না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ব্যবসায়ীদের আপত্তি নেই। তবে সরকার কোন পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করবে, তা আগে থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হলে তাদের জন্য নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা সহজ হবে। 

মূল্যস্ফীতি বাড়ার আরও বড় একটি কারণ হচ্ছে দুর্বল মুদ্রানীতি। এই নীতির সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আঠারো দিনে সরকারকে সহায়তা করতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে দশ হাজার আটশ’ কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়ার প্রভাব ঠিক তখনই না হলেও মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে । অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এখন যে পণ্যের বাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলছে তার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি থাকার কারণে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রা বা নোট ছাপিয়ে সেই টাকা সরকারকে সরবরাহ করে। জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গত অর্থবছরে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিয়েছে যার জন্য টাকা ছাপাতে হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরও সরকার সেই প্রবণতা থেকে সরে আসেনি। ফলে মুদ্রানীতিতে যখন দরকার ছিল মুদ্রা সরবরাহ সংকোচন করা, তখন এই পদক্ষেপটা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়াটা) নতুন করে আবার উসকে দিয়েছে মূল্যস্ফীতির সেই প্রবণতাকে। নীতিগত পর্যায়ে মনিটারি পলিসিতে একটা বড় ধরনের ভুল ছিল বলে মনে করেন তিনি। 
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার নির্ধারিত ছিল। যার আওতায় আমানতের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ এবং ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদের হার ধার্য করা ছিল। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়ে কিছুটা নমনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট সুদহার নামে নতুন নিয়ম চালু করেছে। স্মার্ট হলো সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। অর্থাৎ প্রতি মাসে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার বিবেচনায় নতুন সুদহার ঠিক করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হারের সাথে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে এই ধরনের সুদের হার সুনির্দিষ্ট করে রেখে বা সাম্প্রতিক সময়ে যে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে তা দিয়ে এ ধরণের উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 
ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির পারদ আরও চাঙ্গা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সাল থেকে শুরু করে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দফায় দফায় টাকার অবমূল্যায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৩.৩ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এক ডলারের বিপরীতে ৮৫.৮০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বরে এই বিনিময় হার এসে দাঁড়ায় ১০৫.৪০ টাকায়। আর ২০২৩ সালের ১৪ই অগাস্ট এসে ডলারের দাম ১০৯.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে করে আমদানি কমলেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের অভিঘাত হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশে সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২৩.০৬ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছর ধরে রিজার্ভের এই আকার কমেই চলেছে এবং এখনো পর্যন্ত তা ঠেকানো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ডলার সংকটের কারণে বাজারকে সচল রাখার জন্য যেভাবে এলসি খোলার মাধ্যমে আমদানি করা হয়, সেটিও এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রিজার্ভে ঘাটতি এবং ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। তাদেরকে ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এলসি যখন তারা (ব্যবসায়ীরা) খুলতে যাচ্ছেন, তখন তাদের ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে না এবং তার ফলে সময়মত আমদানি করা যাচ্ছে না। তার ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ সাংঘর্ষিক অবস্থায় আছে এবং সে কারণে মূল্য বাড়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুতরাং সেই মূল্যটা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে।

×