ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১ এপ্রিল ২০২৩

সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় উদ্বেগ

লোগো

মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের নামে একটি জাতীয় দৈনিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম। অন্যদিকে পত্রিকাটির দেশবিরোধী অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীরা শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, পত্রিকাটিতে উল্লেখিত প্রতিবেদনে মূলত একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই শিশুকে তার দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে বলে অন্য একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেওয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালার পরিপন্থি। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

ঢাবি শিক্ষক সমিতি এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি উক্ত সংবাদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেছে, সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশ্যে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীদের মানববন্ধন : মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং গণমাধ্যমকে অপবিত্র, অসম্মান করবেন না, দেশের মানুষ তা রুখে দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীরা। শুক্রবার রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘স্বাধীনতা দিবসে শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে তার নামে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে ‘দৈনিক প্রথম আলোর দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন’ শীর্ষক সমাবেশে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের জননন্দিত কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকতার সঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করবেন না, মানুষকে অসত্য তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকেও অপবিত্র করবেন না। ভালো হবে না। আমাদের মৌলিক বিষয়ের ওপর আঁচড় দিলে সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো আবার মুখে বাঁশি নেব, কোটি কোটি দেশপ্রেমিক মানুষ স্বাধীনতার সম্মান রাখতে, গণমাধ্যমকে পবিত্র রাখতে ছুটে আসবে।

একুশে পদকে ভূষিত স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের জননন্দিত কণ্ঠশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রথম আলো পত্রিকার দায়ীদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সমাজের সবার পক্ষ থেকে এই দেশবিরোধী মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ডা. অরূপ রতন চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন, জাতিকে হেয় এবং বিভ্রান্তকারী হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সম্মান বজায় রাখতে সাংবাদিকতার নামে রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী চক্রান্ত সাংবাদিকরাও মেনে নেবে না, কোনো মানুষই মেনে নেবে না। আইন অনুযায়ীই এ ধরনের অপরাধের বিচার হবে।

স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন টয়েলের সঞ্চালনায় পরিষদ সভাপতি জিন্নাত আলী জিন্না, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, সৌদি আরব আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি  সৈয়দ আনিসুর রহমান, অভিনয়শিল্পী তানভীন সুইটি, দোলাসহ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষক, ছাত্ররা মানববন্ধনে স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার সম্মান বজায় রাখা ও অপসাংবাদিকতার দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে যোগ দেন। 

বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের নিন্দা: বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আহŸায়ক রফিকুল ইসলাম রতন এবং সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু আমরা মনে করি, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতিমালা এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থি ও অপরাধমূলক।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোয় যেভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশন করে রাষ্ট্র এবং জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের চেষ্টা করা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবশ্যই পত্রিকাটির যে কোনো সংবাদ পরিবেশনের অধিকার আছে, কিন্তু সে সংবাদ যদি হয় মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক, তা অবশ্যই সাংবাদিকতা নীতিমালার পরিপন্থি, নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। 

এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মামলা হতে পারে। তবে একজন সাংবাদিককে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তুলে নেওয়াটও সমর্থনযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ও জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণেœœর চেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
 

এসআর

×