ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত

চিকিৎসায় বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চিকিৎসায় বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ধূমপান, মাদক গ্রহণ, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে নানা ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু পরিমিত জীবনযাপন, ধূমপান পরিহার, ব্যায়ামসহ কিছু নিয়ম মেনে চললেই যে কোনো ধরনের ক্যান্সার থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব। এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছরের মতো শনিবার বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার নিয়ে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়।  
‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’ অর্থাৎ ‘বৈষম্য কমাই ক্যান্সার সেবায়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে পালিত দিবসটিতে এক পদযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও ভারতের এইচসিজি ক্যান্সার হাসপাতাল। শনিবার সকালে মিরপুরের ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হয় বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এতে অংশ নেয় দেড় শতাধিক মানুষ। পদযাত্রা শেষে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির কনফারেন্স রুমে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ধনী-দরিদ্র সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হসপিটাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার হোমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ হাই, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন। এ ছাড়া এইচ সি জি ক্যান্সার হাসপাতালের পক্ষে সভায় অংশ নেন ডা. জগদীশ কোঠারী, ডা. কল্পনা কোঠারী, ডা. করন সেহজাল, ডা. স¤্রাট ভট্টাচার্য প্রমুখ।
একই দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ ক্যান্সার এবং তামাকবিরোধী জোট। 
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার হালহকিকত পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর। এদিকে, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার শনাক্তের হার। এই অবস্থায় দ্রুত পুনর্গঠন ও সচল করে ক্যান্সার বিষয়ক যে কোনো প্রকল্প ও পরিকল্পনা এই পরিষদের মাধ্যমে একনেকে পাঠানোর প্রস্তাব জানান তারা। 
তারা বলেন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পদাধিকার বলে কাউন্সিলের সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও সদস্য হিসেবে রয়েছেন ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান, বিএমএর শীর্ষ নেতারাসহ শীর্ষ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এ কাউন্সিলের দীর্ঘদিন ধরে কোনো সভা হয় না।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক প্রধান, অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) মজিবুল হক, বারডেম হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, গাইনি অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সম্পাদক অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাসহ  অনেকে।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, শরীরে ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে শনাক্ত করা গেলে ক্যান্সার থেকে সুস্থতা সম্ভব। এ জন্য দেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আলাদাভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জাতীয় ক্যান্সার নিবন্ধন কর্মসূচির আওতায় হাসপাতাল ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক নিবন্ধন চালু ও সম্প্রসারণ করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালু করতে হবে চলমান অসম্পূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ ও অসংগঠিত পদ্ধতির পরিবর্তে সমাজভিত্তিক সংগঠিত পদ্ধতিতে। হেপাটাইটিস ও এইচপিভি টিকাসহ ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে সরকারের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই কর্কট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। ক্যান্সার একটি বড় রোগ, যার সময়মতো চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়।
ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদ্যাপন করা হয় দিবসটি যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে।

×