ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় ॥ দেশী ফল খাওয়ার আহ্বান

রমজানে অতি বিলাসী বিদেশী ফল আমদানি বন্ধের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

রমজানে অতি বিলাসী বিদেশী ফল আমদানি বন্ধের দাবি

রমজান এলেই বাড়ে দ্রব্যমূল্য

রমজান এলেই বাড়ে দ্রব্যমূল্য। বাজারে তৈরি হয় ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট। এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকান ইচ্ছেমতো। আসন্ন রমজানে ফলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে অতি বিলাসী বিদেশী ফল আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার বলছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা ড্রাগন, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও রকমেলনের মতো বিলাসী ফল সুপারশপ এবং অভিজাত এলাকার ফলের দোকানে অতি উচ্চদামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশী ফলের বাজারে। পাশাপাশি আপেল, আঙুর ও কমলার মতো বিদেশী ফলের দামও বাড়ছে। সোমবার ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিউজ্জামান।
সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত বাজারে গেলেও থরে থরে বিদেশী ফল সাজানো দেখা যায়। এতে দেশ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশীয় ফলের প্রাচুর্যতাও কম নয়। পুষ্টির দিক দিয়েও দেশী ফল কোনো অংশে কম নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। তাই এবার রমজানে ভোক্তাদের বিদেশী ফলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশী ফল খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য দেশী ফলের উৎপাদন বাড়াতে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। এবার ডলার সংকটের কারণে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসহ সব সংস্থার সম্পৃক্ততা দরকার, যাতে এই সময় সবাই সহনশীল আচরণ করে এবং খাদ্য সাশ্রয় করতে পারি। তবে রমজানে চাহিদা মেটাতে খেজুর, মাল্টা, আঙুর, কমলার মতো কিছু বিদেশী ফল আমদানির জন্য এলসি খোলার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এর বাইরে যে সব বিলাসী ফল রয়েছে, সেগুলোর আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান বলেন, রমজান উপলক্ষে টিসিবি ১০ হাজার টন খেজুর আমদানি করবে। সেগুলো টিসিবির ট্রাকে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া যে সব ফল ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো বন্দর থেকে দ্রুত খালাসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শুধু দেশী ফল দিয়ে রমজানের চাহিদা মিটবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। সভায় বাংলাদেশ ফ্রেসফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর রমজান মার্চের শেষে হবে।

এ সময় দেশীয় ফলমূল খুব একটি বেশি থাকে না। শুধু তরমুজ, কলা, আনারস, পেয়ারা ও বরই পাওয়া যাবে। দেশীয় ফলের ভরা মৌসুম শুরু হয় মে মাসে। তখন ফল আমদানি না করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এখন ফল আমদানি না করলে চাহিদা মেটানো যাবে না।
তিনি বলেন, দেশে ফলের যে চাহিদা তার মাত্র ৩৫-৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ৬০-৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া রমজানে ৪০ হাজার টন ফল আমদানি করতে হয়। কিছু ফল ইতোমধ্যে আমদানি করলেও এলসি বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যায়নি। ফলে চাহিদা অনুসারে জোগান না থাকলে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জনগণ যদি মনে করে, রমজানে বিদেশী ফলের প্রয়োজন আছে, তাহলে এলসি খুলে দিতে হবে এবং সহজে ফল আমদানির সুযোগ দিতে হবে।

আর যদি মনে করে, দেশী ফল দিয়েই চাহিদা মেটানো যাবে, তাহলে আমদানির প্রয়োজন নেই। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা, শাহনাজ সুলতানা, ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফল মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং ক্যাব ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

×