ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ থেকে যেভাবে ফিরে এলেন নিলয়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৬ অক্টোবর ২০২২

জঙ্গীবাদ থেকে যেভাবে ফিরে এলেন নিলয়

শারতাজ ইসলাম নিলয়

খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য তরুণদের সঙ্গে ঘর ছাড়েন ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২)। তাকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তবে পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন জঙ্গীবাদ ভুল পথ।

বৃহস্পতিবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে নিলয় সাংবাদিকদের জানান, পরিবার ছেড়ে হিজরতের কথাটা যখন আসে তখন থেকে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করি। সুযোগ বুঝে আমি বাসায় ফিরে আসি। ফিরে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। তার দেয়া তথ্যে র‌্যাব বুধবার রাতে সাতজনকে গ্রেফতার করে।
মানুষকে কতল করতে হবে, কথিত তাগুতকে উৎখাত বা সশস্ত্র হামলা, জঙ্গীদের এসব কার্যক্রম বিষয়ে নিলয় বলেন, সশস্ত্র প্রস্তুতির কথা বারবার শুনেছি। কিন্তু আমি সেই স্টেজ (পর্যায়) পর্যন্ত যেতে পারিনি। তার আগেই ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসি। যারা এখনও নিখোঁজ কিংবা উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের পথে রয়েছেন, তাদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কিনা, জানতে চাইলে নিলয় বলেন, আমি চার-পাঁচদিন ছিলাম। এর মধ্যেই বুঝতে পারি এটি ভুল পথ।

আসলেই এটি ভুল পথ। এটি ভুল পথ, এই ভুল পথে আর যেন কেউ পা না বাড়ায়।
নিলয় জানায়, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় সেসহ পাঁচজন নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিলা টাউন হল এলাকায় আসেন। পরে সোহেল নামে এক ব্যক্তির নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পরে আমি, সামি ও নিহাল একত্রে যাত্রা করি। তবে তারা ভুলবশত চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়।

তারা ভুল বুঝতে পেরে রাতযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায়। পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। তারা রাতে হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে গেলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।

ওই বাড়িতে আগে থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিলেন। পরে সোহেলের নির্দেশে সে বাড়িতে তাদের থাকা হয়নি। পরে আমি, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উলাহর কাছে পৌঁছে দেন সোহেল। নিয়ামত উলাহর তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর জঙ্গী গুরু সোহেল অন্য চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। এ সময় সোহেল নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ব্যক্তির নিকট বুঝিয়ে দেয়। এ সময় আমাকে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকেট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠান।

পরে সেখান থেকে আমাকে রিসিভ করে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত বনি।  পরে সে আমাকে (নিলয়) স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যান। সেখানে হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে বনি তিন দিন তার বাসায় রাখেন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরে আমাকে গ্রেফতারকৃত আরেক জঙ্গীগুরু হোসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসেন। এর পরই সেই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসি আমি। বৃহস্পতিবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এভাবে সাংবাদিকদের সামনে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া ঘর ছেড়ে যাওয়া নিলয় এসব কথা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৩ আগস্ট কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান সাত শিক্ষার্থী। যাওয়ার সময় তেমন টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন কিংবা বাড়তি পোশাকও নেননি তারা। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলেও নিখোঁজ প্রত্যেকেই ছিলেন পরস্পরের পরিচিত। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। স্বজনদের দাবি, পড়াশোনার বাইরে অন্য কোন বিশেষ বিষয়ের প্রতি কখনও তারা সন্তানদের আগ্রহ দেখেননি।

কলেজ, কোচিংয়ের বাইরে যে সময়টি পেতেন তার বেশিরভাগটাই বাসায় বই পড়ে কিংবা মোবাইল ফোনে তারা সময় কাটাতেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল মান্নান জানান, নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা নিলয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান, সামি, কুমিল্লা সরকারী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম, নিহাল, ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, একই কলেজের তৃতীয় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এদের মধ্যে নিলয় পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসায় ফিরে আসেন। আর বাকি চারজনকে র‌্যাব আটক করে।

×