ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মহাষ্টমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে কুমারী ও সন্ধি পূজা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৩ অক্টোবর ২০২২

মহাষ্টমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে কুমারী ও সন্ধি পূজা

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে সোমবার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়

এখন পূজা উৎসব মানেই থিম। ট্রাডিশনের সঙ্গে ট্রেন্ড মিলিয়ে নতুন কিছু করার প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশও এ প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে নেই। নানা থিম নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দুর্গাপূজার ম-পগুলো। বাঙালী সংস্কৃতির পাশাপাশি পাশ্চাত্যের অনেক কিছু মিলিয়ে বর্ণাঢ্য ও মনোলোভা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে দেশের বড় বড় পূজাম-প। ত্রিনয়নী মা দুর্গার মূর্তিও গড়ে তোলা হয়েছে নানা থিম নিয়ে।
শারদীয় দুর্গোৎসবে সোমবার মহাষ্টমীর দিনে কুমারী পূজায় মানুষের ঢল নেমেছিল। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-পে আয়োজিত এ কুমারী পূজায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। হাজার হাজার ভক্ত-পূজারী এবং দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে এই পূজা উদ্যাপিত হয়েছে সাড়ম্বরে। পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন সোমবার মহাষ্টমীতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহাষ্টমী কল্পপারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহীত পূজা শুরু হয়। শেষে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এরপর বিকেল ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।

রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজাম-পে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব ম-পে পূজার সময়ের কিছুটা হেরফের ঘটে। সর্বত্র পূজা শেষে ভক্ত ও পূজারীরা মহাষ্টমীতে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করে তার কৃপা ভিক্ষা করেন।
উৎসবের চতুর্থ দিনে আজ মঙ্গলবার মহানবমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহানবমী কল্পরারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা শুরু হবে। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। এ উপলক্ষে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজাম-পে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা।
সোমবার মহাষ্টমীর দিনে সকাল ১১টায় রামকৃষ্ণ মিশন পূজাম-পে সব নারীতে মাতৃবুদ্ধি রূপ উপলব্ধি করতে আয়োজিত হয় কুমারী পূজা। এবার দেবীর প্রতীকীরূপে পূজা প্রদান করা হয় ১২ বছরের কুমারী মেয়েকে। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার নামকরণ করা হয়।
ঢাকার গোপীবাগ এলাকার কুমারী এই মেয়েকে সকালে স্থান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। ফুলের মালা, নানা অলঙ্কার ও প্রসাধনে নিপুণ সাজে সাজিয়ে পূজা দেয়া হয় তাকে। দেবীর মঞ্চে তাকে অধিষ্ঠানের আগে মন্ত্রোচ্চারণ ও ফুল, বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেয়া হয় সবার কাছে। এরপর শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। হাজারো হিন্দু নারীর উলুধ্বনি আর পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হয়।
কুমারী পূজাকে ঘিরে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মিশন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পরই ভক্তদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। গোপীবাগ মোড় থেকে গোপীবাগ মাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়। দর্শনার্থী ও পূজারীদের ব্যাপক ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মোড় থেকে হেঁটে মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ম-পে প্রবেশ করেছেন। কুমারীপূজা শেষে প্রায় ৩৫ হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
ঢাকা ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, বরিশাল ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং ঐতিহ্যবাহী পূজাম-পে সোমবার কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। মহাষ্টমী পূজা শেষে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির পূজাম-পেও ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পূজা শেষে সন্ধ্যায় মণ্ডপে ভোগআরতির আয়োজন করা হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে সোমবার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। আজ মহানবমীতে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

×