
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও ১৫ মাস বাকি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও ১৫ মাস বাকি। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই শক্তি প্রদর্শনের মহড়া শুরু হয়ে গেছে। মাঠ দখলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটছে। এ কারণে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। এদিকে চলমান দলীয় কর্মসূচীতে বাধা দেয়া হলেও বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের ভোটের আগে মাঠ ছাড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
অপরদিকে বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজপথে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে। কর্মসূচী পালনের নামে কেউ সহিংসতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জুলাই মাসের শেষ দিক থেকেই বিএনপি রাজপথ দখলে নেয়ার কথা বলে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। প্রথমে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচী পালন করলেও ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচী পালন শুরু করে। যেভাবে তারা ২০১৩ সালের কঠোর আন্দোলনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচী পালন জোরদার করেছিল এবারও সেভাবেই তৃণমূল থেকে আন্দোলন জোরদারের কৌশল নেয় দলটি। আর প্রতিদিনই বিএনপির সিনিয়র নেতারা আন্দোলনে সরকার পতনের হুমকি দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও বিএনপিকে পাল্টা হুমকি দিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এর প্রভাব পড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে। এ কারণেই এখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজপথে কর্মসূচী পালনকে কেন্দ্র করে হামলা-পাল্টা হামলাসহ সংঘর্ষ হচ্ছে। কোথাও কোথাও এ সংঘর্ষ সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।
কোথাও কোথাও কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখেও পড়ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ কারণে পুলিশ-বিএনপির মধ্যেও সংঘর্ষ হচ্ছে। এসব সংঘর্ষে সম্প্রতি বিএনপির ৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ভোলার নুরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধান এবং মুন্সীগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওন।
এদিকে এতদিন বিএনপি ঢিলেঢালাভাবে কর্মসূচী পালন করলেও ৪ জন কর্মী নিহত হওয়ার পর রাজপথের কর্মসূচী আগের চেয়ে জোরদার করে। এখন বিভিন্ন কর্মসূচীতে লাঠি নিয়েও দলটির নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা যায়। এছাড়া আগে কোন কর্মসূচী পালনের পর চুপচাপ নেতাকর্মীরা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলেও ইদানীং সভা-সমাবেশ শেষে মিছিল করে নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন অলি-গলিতে অবস্থান নিয়ে বিএনপি যাতে রাজপথ দখলের নামে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়েছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে একই স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমাবেশ কর্মসূচী ডাকায় এ নিয়ে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজপথে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এসব কারণে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও রাজপথে কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে হয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি না হয় পুলিশ- বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ এবং এসব সংঘর্ষ সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি আবারও নতুন করে দেশব্যাপী ২ মাসের আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচী শেষে আবারও কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলও পরস্পরবিরোধী কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে অধিক সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য ছাত্রদল টেস্ট কেস হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। ছাত্রদলের নেতাদের মতে বিএনপির আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে। কারণ অতীতের সকল আন্দোলনের ঢেউ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের নামে বিশাল শোডাউন করার চেষ্টা করে। এ পরিস্থিতিতে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে ভেবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছাত্রদলকে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেয়। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে ছাত্রদল ছাত্রলীগের তাড়া খেয়ে পিছু হটলেও আবারও ক্যাম্পাসে ফিরে আসার ঘোষণা দেয়ায় সেখানে এখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ দলের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল হিসেবে ইদানীং বড় দুই রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা প্রতিদিনই বাকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতারা বলছেন, গণআন্দোলনেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। যত বাধাই আসুক রাজপথ থেকে পিছু হটব না। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বারবার আন্দোলনে সরকার পতনের হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্দুকের নল থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। রাজপথ থেকেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে রাজপথেই খেলা হবে। তাই আমাদের আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়। বিরোধী দলগুলোর যে কোন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী রাজপথে মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত। রাজপথে আগুন নিয়ে খেলতে আসলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। পর্যবেক্ষক মহলের মতে দুই বড় দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের পর সারাদেশের আওয়ামী লীগ ও নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে অধিক সক্রিয় হয়। এর পর থেকেই সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কখনও বড় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং কখনও বিএনপি-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫ মাস বাকি থাকতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজপথে সরাসরি বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে যাওয়ায় এবং কখনও কখনও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হওয়ায় আবার দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাজপথে আন্দোলন বা কোন কর্মসূচী পালনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজপথে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিতে চায়। এ জন্য নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ২০ দলীয় জোটে থাকা তাদের সমমনা দল ও এর বাইরে থাকা আরও কিছু বাম ও মধ্যপন্থী দলকে নিয়ে রাজপথ দখলের চেষ্টা করছে। আর আওয়ামী লীগও ১৪ দলীয় জোটে থাকা সমমনা দলগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু দলকে কাছে টেনে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার ও রাজপথে বিরোধী দলকে মোকাবেলার চেষ্টা করছে।
এ কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি এখন থেকেই মাঠে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে আর আওয়ামী লীগ মাঠ নিজেদের দখলেই রাখার চেষ্টা করছে। এ কারণে ইতোমধ্যেই কর্মসূচী পালনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। তবে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের বাধার মুখে পড়ছেন। আর সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, কেউ রাজপথে বিশৃঙ্খলা করতে গেলে শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুসারে কোন কর্মসূচী পালন করতে গেলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এভাবে হামলা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আন্দোলন কর্মসূচীতে হামলা ও গুলি চালিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যেই বিএনপির ৪ জনকে হত্যা করেছে।
উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জে পুলিশ গুলি করে শাওনকে হত্যার পর আবার তার নামেই মামলা দিয়েছে। এত নির্যাতনের পরও বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে আসবে না। বিএনপির এখন একটাই লক্ষ্য যারা ক্ষমতায় বসে আছে আন্দোলন করে তাদের সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য যত বাধাই আসুক বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না। রাজপথই এখন বিএনপির ঠিকানা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সারাদেশে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা করা হচ্ছে। তাই এখন থেকে যেখানে আঘাত সেখানেই পাল্টা আঘাত করা হবে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই যুদ্ধ আমাদের জন্য ‘ডু অর ডাই’। রাজপথে থেকেই আমরা যুদ্ধ করব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশের মানুষ উত্তাল হয়ে উঠেছে। তাই তাদের আর ব্যারিকেড দিয়ে রাখতে পারবে না সরকার। বরং পথে ঘাটে মাঠে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যারিকেড তৈরি হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের গুলি করলে শরীর থেকে রক্ত ঝরবে এবং সেই রক্ত যে মাটিতে পড়বে সেই মাটি আরও তেজস্বী হবে। দলের যে সকল নেতাকর্মী লাঠিতে পতাকা বেঁধে মিছিলে অংশ নিচ্ছে তাদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, পতাকার লাঠি আরও বড় করতে হবে।
বিএনপির এমন রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ও তার দোসররা জানে নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাই তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে দেশে আর পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে না।
নির্বাচনের মাধ্যমেই ফয়সালা হবে কে ক্ষমতায় থাকবে। তাই আন্দোলনের নামে রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবেই তাদের মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্ট ও একুশে আগস্টের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। তাই আমরা এখন অনেক সতর্ক। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল, তাদের হাতে এখন সেই রক্তের দাগ দগদগ করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, বিএনপি লাঠিসোটা নিয়ে দলীয় কর্মসূচীর নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা লাঠি হাতে নিয়ে রাস্তায় নামে, ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা পায়ে পা দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু তাদের আর সে সুযোগ দেয়া হবে না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবেই প্রতিহত করা হবে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। কোনভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।
বিএনপি কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ২২ আগস্ট থেকে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে হতাহত করার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচী পালন শুরুর পর এ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক জায়গায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে- মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার মিরপুর ও হাজারিবাগ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি, গাইবান্দার গোবিন্দগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, লক্ষ্মীপুর, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, ময়মনসিংহের ফুলপুর, ত্রিশাল, বরিশালের মেহিন্দিগঞ্জ, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, সফীপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বাশখালী, ঝালকাঠি, যশোর, ঝিনাইদাহের শৈলকুপা, নরসিংদীর রায়পুরা, রাজশাহীর কাশিডাঙ্গা, খুলনা, মাগুড়া, কুমিল্লা। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব জায়গায় হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনভাবেই এসব ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে চায় তারা। এজন্য সমমনা বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাার পর আবারও আলোচনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার সংলাপে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচী চূড়ান্ত করে শীঘ্রই তা প্রকাশ করা হবে।
এর আগে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্য এখন সর্বস্তরে লাগাতার কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচীতে হামলা, সংঘর্ষ, মামলা, ও সংঘর্ষ হলেও কোনভাবেই পিছু হটবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগ পর্যন্ত রাজপথেই থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতা বাড়াতে থাকলে আওয়ামী লীগও নেতাকর্মীদের নিয়ে জোরালোভাবে বিএনপিকে প্রতিহত করবে বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তারা জানান, কোনভাবেই বিএনপিকে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। এখন থেকে যেখানেই বিশৃঙ্খলা করা হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে রাজপথ দখলে রাখতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় করা হয়েছে।
সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোসহ সকল অংশীজনের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপ শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপও প্রকাশ করেছে। রোডম্যাপ অনুসারে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ইসি।
ইতোমধ্যেই কমিশন থেকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। এজন্য ২০০ ইভিএমে মেশিন ক্রয় ও প্রশিক্ষণ বাবদ ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে সরকারের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। তবে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো ইভিএমে ভোট চায় না বলে এ সংবাদ শুনে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। রাজপথে কর্মসূচী জোরদার করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে ফেলতে শীঘ্রই বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচী জোরদার করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগও তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজপথের আন্দোলন মোকাবেলার জোরদার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ মহল দেশের রাজপথ আরও বেশি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে।