ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে জাতীয় গৃহকর্মী সম্মেলন

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাজধানীতে জাতীয় গৃহকর্মী সম্মেলন

শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তি দাবি

নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা এবং শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন গৃহকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় গৃহকর্মী সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। 

এ সময় বক্তারা বলেন, গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিক আচরণ এবং তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে তাদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তিকরণ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবাসস্থল নির্মাণ গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রতিবাদ, আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ মান্নান। সুনীতি প্রকল্পে সহযোগী প্রতষ্ঠান অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হ্যালোটাস্ক, কর্মজীবী নারী, নারী মৈত্রী, রেড অরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশের সহযোগীতায় আয়োজিত সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে সাতশতাধিক গৃহ শ্রমিক অংশ নেন।

এ সময় ২০১৫-২০১৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপের বিষয় তুলে ধরে জানানো হয়, এই জরিপ অনুযায়ী, দেশে গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ, যার মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। কিন্তু অনেকে মনে করেন, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কেবল মাত্র ঢাকা শহরে প্রায় ৩ লাখ মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। এসব নারী গৃহকর্মীদের বেশিরভাগই নিরক্ষর বা স্বল্পসাক্ষর, তাদের অনেকেরই পেশাগত কোনো প্রশিক্ষণ নেই, অনেকেই নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নয়। 

দৈনিক সংবাদপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যাছিল ৩৮ এবং ২০২২ সালে (জানুয়ারি-জুন) ১৬ জন। 

তবে আশার কথা ইতোমধ্যেই সরকার সার্বিকপরিস্থিতির উন্নয়নে শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ স্বাক্ষর, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫’ প্রণয়ন, শ্রমমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলগঠন, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন ইত্যাদি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, প্রয়োজনীয় আইনী কাঠামোর অভাবে এসব নীতিমালা ও অপরাপর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। উপরন্তু, গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬-এ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় গৃহকর্মীরা শ্রমিকের অধিকার, সুযোগ ও সুবিধা পাচ্ছে না।  এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পেছনে পড়ে থাকা এ বিশাল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষার জন্য অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এবং গেøাবাল এফেয়ার্স কানাডা-এর সহযোগিতায় ৮টি সংগঠন ২০১৯ সাল থেকে ‘সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 

এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান, তবে তা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনী সহায়তা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।  গৃহকর্মীদের বঞ্চণা, শোষণ, নির্যাতন প্রতিরোধে সকলকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইনজীবী, আইন প্রণেতা সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। গৃহশ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি বৃহৎ প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরী করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে করলে তা সরকার বিবেচনা করতে পারে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। 

আইন প্রণয়ন ছাড়া আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত মোঃ মুজিবুল হক বলেন, শ্রম আইন সংশোধনীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে গৃহ শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি সর্বাত্মকসহ যোগিতার আশ্বাস দেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলে গৃহকর্মীদের বাসস্থান সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হতে পারে। 

আরেক বিশেষ অতিথি শ্রম সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, গৃহশ্রমিকদের জন্য নীতি প্রণীত হলেও তার পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে সম্মিলিত সহায়তা অব্যাহত থাকলে কাজটি এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মনিটরিং সেলের সভা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আহ্বান করে সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভূমিহীন গৃহশ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন করে শ্রম অধিদপ্তরে পাঠালে তা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হবে, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের শর্তের আওতায় সহায়তা পেতে পারেন।
এ সময় শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন গৃহশ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে তাদের সংঘবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গৃহশ্রমিকদের জীবন মানেরও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। 

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী। 

আরও বক্তব্য দেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, গৃহশ্রমিকঅধিকারপ্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কেরভারপ্রাপ্তসমন্বয়কারীআবুল হোসাইন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশেরকান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলেসহ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, নিয়োগকারী ও গৃহশ্রমিক প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে রাশেদা কে চৌধুরী সকল পক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, সকলপক্ষের সম্মিলিত সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে গৃহশ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নসহ তাদের জীবন মান উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিআকর্ষণ করতে পারলে তিনি চা শ্রমিকদের মতো গৃহ শ্রমিকদের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে পারেন। তিনি এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে দাতাসংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 


 

এসআর

×