ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল

নেতাকর্মী হত্যা করে আন্দোলন দমানো যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

নেতাকর্মী হত্যা করে আন্দোলন দমানো যাবে না

মুন্সীগঞ্জে যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওনের হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশ

গুলি চালিয়ে নেতাকর্মী হত্যা করে বিএনপির আন্দোলন দমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুন্সীগঞ্জের যুবদলকর্মী শাওন হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন গণআন্দোলনের মধ্য এই সরকারকে পরাজিত করি, তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করি।
সরকার সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। কথায় কথায় মানুষ হত্যা করা দেশের মানুষ আর মেনে নেবে না। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। দেশের সকল গণতন্ত্রমনা মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমি আহ্বান করছি, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামুন। আমার এ আহ্বান দেশকে রক্ষা করার জন্য, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে ক্ষমতার মালিক হচ্ছে জনগণ। আমরা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই। মানুষের জীবনের অধিকার চাই, নিরাপত্তা চাই। সাম্প্রতিক আন্দোলনে বিএনপির ৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার কথায় কথায় গুলি করে মানুষ হত্যা করবে তা দেশের মানুষ আর সহ্য করবে না।
ফখরুল বলেন, দেশে এখন রক্ত ঝরিয়ে, ভয় দেখিয়ে, খুন করে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়। মুন্সীগঞ্জে শুধু শাওনকে হত্যা করে ক্ষ্যান্ত হননি। তারা বিএনপির এক নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এভাবে সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি বলেন, এ সরকার আমাদের ৬ শতাধিক মানুষকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলেন যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। অথচ দেশে গুলি করে মানুষ মারে।
সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, এখনও সময় আছে পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। এরপর এই সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার ও সংসদ গঠন করা হবে।
মুন্সীগঞ্জের শাওন, নারায়ণগঞ্জের শাওন ও ভোলার আব্দুর রহিম ও নুর আলমের মৃত্যুতে মানুষের, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যে অভ্যুত্থান হয়েছে, এই অভ্যুত্থানকে কখনও বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আজকে শাওনের বাবার কণ্ঠে আমরা আহাজারি শুধু শুনিনি, তার চোখে শুধু অশ্রু দেখিনি, তার চোখে আগুন দেখেছি। বজ্রকণ্ঠে তিনি বলছেন, আমি আপস করব না। তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সবাইকে দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের অত্যাচার-নিপীড়ন মানুষ আর সহ্য করবে না।
সমাবেশে নিহত যুবদল নেতা শাওনের পিতা সোয়াব আলী ভূইয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে শাওনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। আবার মামলায় আমার ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। এখন আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমরা কোন দেশে বাস করি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের হচ্ছে বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। আমি এ কষ্টের কথা বলে বুঝাতে পারব না। আমি গরিব মানুষ, আমি নিরাপত্তা চাই। নিরাপদে চলাফেরা করতে চাই।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।
এর আগে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। এ বিষয়টি বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার আগে উন্নয়নের কথা খুব বেশি বলত এখন একটু কম বলে। তিনি বলেন, উন্নয়ন কখনই টেকসই হবে না, যদি সেখানে গণতন্ত্র না থাকে। আর গণতন্ত্র কখনই ফলপ্রসূ হবে না, যদি সেখানে বিরোধী দল সক্রিয় না থাকে এবং নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে না পারে।
ফখরুল বলেন, দেশের শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর আওয়ামী লীগ নেতারা কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ অবস্থার অবসান তরুণদেরই ঘটাতে হবে। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। সরকার পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শাওন, আব্দুর রহিম, নূরে আলমের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। বর্তমান সরকারকে প্রতিহত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে তাদের রক্তের বদলা নেয়া হবে।
ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় বড় কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউই যুদ্ধ চায় না, কেউ নিষেধাজ্ঞাও চায় না। কিন্তু তার মুখে এটা মানায় না। কারণ, দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে গেলে মানুষ হত্যা করা হয়। ইতোমধ্যেই গুম করা হয়েছে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ ৬ শতাধিক মানুষকে। মা জানে না, বাবা জানে না, ছেলে-মেয়েরা জানে না কোথায় তারা। এভাবে ‘এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে। এ কারণে যারা একসময় দেশের সুনাম কুড়িয়েছিল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সেই র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সরকারের অন্যায় আদেশ মানতে গিয়ে র‌্যাব এই নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনীতির শুরুটা করেছিলেন ফুল দিয়ে। সবার নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা যে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম আওয়ামী লীগের সভায় যোগ দিতে দেশে এসেছিলেন তখন তার কাছে ফুল উপহার পাঠিয়েছিলেন তারেক রহমান। অর্থাৎ এই যে সমঝোতার রাজনীতি, গণতন্ত্রের যে সহনশীলতা তার নতুন দৃষ্টান্ত তিনি শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে গণতন্ত্রকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, বিএনপির রাজনীতিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন শুরু করেছিলেন। তাকেও ওয়ান-ইলেভেন সরকার রেহাই দেয়নি, তার ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে এবং এখন আওয়ামী লীগ সরকারও তাকে মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ১৪ বছরে যারা সরকারে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থে নতুন করে ইতিহাস রচনা করার অপচেষ্টা করছে। আমরা জানি ইতিহাস রচনা করে ঐতিহাসিকগণ এবং ইতিহাসবিদরা। এ ছাড়া কেউ ইতিহাস রচনা করতে পারে না। তবে আওয়ামী লীগ হয়তো ইতিহাস নিয়ে সাময়িক রচনা লিখতে পারে।
বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ প্রমুখ।
নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে সংবাদমাধ্যম বিরোধী দলের চেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে - গয়েশ্বর ॥ সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিরোধী দলের চেয়েও অনেক বেশি অবদান রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ সিভিল রাইটস সোসাইটি’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর বলেন, সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও সংবাদমাধ্যমে সমালোচিত, বিরোধী দলে থাকলেও সমালোচিত। এখানে গণমাধ্যমের একটি বড় স্বাধীনতা রয়েছে। অনেক সময় আমার বিরুদ্ধেও সংবাদ প্রচার করা হয়। কিন্তু আমি সমালোচনা সহ্য করি। কোন সম্পাদককে ফোন করি না। কারণ, আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা সমালোচনা সত্ত্বেও উত্তর দিতেন না, ধৈর্য ধরতেন। সমালোচনা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। গণতন্ত্রের জন্য ধৈর্য খুব জরুরী।
সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছে জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপিকে যদি নির্বাচনে আনা যায়, তাহলে কেমন হয় এটি ভাবছে সরকার। এমন খবর আমাদের কানে আসছে। তবে খালেদা জিয়া মুক্ত হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে বিভিন্ন কথা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেই। তবে খালেদা জিয়া আপোসহীন। তাই তিনি আপোস করে মুক্ত হবেন না। আমার কথা হলো, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিলে সরকার নিজেই ক্ষমতায় থাকবে কিনা সেটিই বড় প্রশ্ন। সিভিল রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহসহ অন্যরা।

 

×