.
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য। আমিষের প্রধান উৎস ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। চাল, ডাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজ, মাছ-মাংস ও শাক-সবজিসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিহালি ডিম ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। দাম কমার তালিকায় রয়েছে এমন কোন ভোগ্য ও নিত্যপণ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি রাজধানী ঢাকায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ঢাকার বাজারগুলোতে ভোগ্যপণ্য কেনাকাটায় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। দাম আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা থেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল নগরাসীর কেউ কেউ বাড়তি পণ্য কিনছেন। এতে করে দাম বাড়ার মধ্যে বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের বেচাকেনা বেড়েছে। এতে বাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের কেনাকাটা আরও সীমিত হয়ে পড়ছে। এতে করে বাজারে আবার অনেক পণ্যের কেনাকাটা কমেও গেছে। চলমান এ পরিস্থিতি নিয়েও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ রয়েছে।
অন্যদিকে পণ্যের অতিরিক্ত দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূল্যস্ফীতির সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে- দেশে কোন পণ্যের সঙ্কট নেই।
বরং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সেসব পণ্যের মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুদ করার প্রয়োজন নেই। দেশে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর মূল্যস্ফীতির সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে করে বাজারে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। তবে মূল্য বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, শুক্রবার সারাদেশে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। দু’একটি পণ্যের দাম অপরিবির্তত থাকলেও শীঘ্রই দাম বাড়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি চালে ৩-৬ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এতে করে নাজিরশাইল ও মিনিকেট খ্যাত সরু চাল প্রতিকেজি ৬৫-৭৮, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫৩-৫৮, মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যদিও বাজারে এই দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। দাম বেড়ে মানভেদে প্রতিকেজি আটা ৪৫-৫৫, ময়দা ৫৮-৭২, সয়াবিন খোলা প্রতিলিটার ১৬৫-১৭২, বোতলজাত সয়াবিন প্রতিলিটার ১৮৫-১৯০, পাঁচ লিটারের ক্যান ৮৯০-৯১০, পামওয়েল সুপার খোলা ১৩০-১৪০, পামওয়েল সুপার ১৪৫-১৫০, মসুর ডাল প্রতিকেজি ১১০-১৬০, পেঁয়াজ প্রতিকেজি মানভেদে ৪৫-৫৫, আলু ৩০-৩৫, রসুন প্রতিকেজি ৭০-১৩০, আদা ৯০-১৪০, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০, ডিম প্রতিহালি ৪৮-৫০, চিনি ৮২-৮৫ এবং প্রতিকেজি লবণে ৭ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে হঠাৎ করে সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের ম্যানেজার হাজী আবদুল গনি জনকণ্ঠকে বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে পাইকারি বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। এটিও দাম বাড়ার জন্য দায়ী। এ কারণে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি নজরদারি প্রয়োজন।
এদিকে ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি মাছ-মাংসও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। রুই, কাতল, মৃগেল, চিংড়ি, কৈ, পাবদা, পুঁটি ও ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমেও এককেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে একই সাইজের ইলিশ কিনতে ভোক্তাকে ৮০০ টাকা দিতে হয়েছে। ইলিশ মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগর ও নদীতে ট্রলার চালিয়ে মাছ ধরা হয়। কিন্তু এতে ডিজেলের মতো জ্বালানি তেলের ব্যবহার রয়েছে। ফলে তেলের দাম বাড়ায় বেড়ে গেছে ইলিশ মাছের দাম। গরু ও খাসির মাংসও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জাত ও মানভেদে কাঁচামরিচ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি শাকে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।