
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী ॥ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে যানজটে নাকাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘুরে এবং ঘাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ৬ কিলোমিটার বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের দুটি সারি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ৩টি রোরো (বড়) ফেরি বিকল থাকার কারণে পাটুরিয়া ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামত করা হচ্ছে।
মাত্র ১৬টি ছোট-বড় ফেরি দিয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন নদী পারাপার করা হচ্ছে। এদিকে দৌলতদিয়া পারে ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ৩টি ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন যাবত অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না। এদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট গত বর্ষায় নদী ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে জোড়াতালি দিয়ে কোন রকম যাত্রী পারাপার করছে। কিন্তু ৭/৮ মাস কেটে গেলেও দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের সংযোগ সেতু মেরামত করা হয়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে কোন রকম তড়িঘড়ি করে জোড়াতালি দেয়া হচ্ছে। কবে নাগাদ মেরামত কাজ শেষ হবে নিশ্চিত বলতে পারছে না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আরিচা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পোর্ট অফিসার শাহ আলম জানান, ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘরমুখী যাত্রীদের নদী পারাপার করার জন্য সব প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের সংযোগ সেতুর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটা চলমান কাজ। এই কাজে ঘরমুখী যাত্রী পারাপারে কোন প্রকার সমস্যা হবে না। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার নূরুল আনোয়ার মিলন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের যে সমস্যা বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু লোক দেখানোর জন্য তারা এখন কাজ করছে। এতে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী সেতু নামের এক নারী বলেন, ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৮ ঘণ্টা যাবত অপেক্ষায় আছি। এই তীব্র গরমে অসুস্থ মাকে নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। কখন ফেরি পার হতে পারব কিনা তা জানি না। তিনি বলেন, গোল্ডেন লাইন পরিবহনে অসুস্থ মা ও ভাইকে নিয়ে ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছি। কিন্তু ৮ ঘণ্টা যাবত দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় বসে আছি।
এ সময় আব্দুর রহমান নামের ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি বলেন, ঢাকা থেকে সকাল ৬টায় কুষ্টিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসি। কিন্তু গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে ৯ ঘণ্টা ব্যয় হলো। তা হলে কুষ্টিয়া যাব কখন। তিনি বলেন, রোজা থেকে এই গরমের মধ্যে এত দুর্ভোগ কখনও হয়নি। ঈদের আগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে এত যানজট। তাহলে ঈদে ঘরমুখি মানুষের কি অবস্থা হতে পারে।
সেতু ও আব্দুর রহমানের মতো শত শত যাত্রী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরির দেখা পাচ্ছে না। ৩০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ৭/৮ ঘণ্টা ব্যয় করতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। এ সময় পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে।
পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান চালক ইব্রাহিম জানান, ‘বেনাপোল থেকে ২৩ তারিখ সন্ধ্যার সময় দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। আজ ২৫ এপ্রিল। কিন্ত এখনও পর্যন্ত ফেরি ঘাটে যেতে পারলাম না। কবে কখন যেতে পারবো সেই নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারছে না।’ তিনি বলেন, প্রচন্ড গরম। আর এই গরমের মধ্যে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির জন্য। এমন দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এই দুর্ভোগ কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বারখ্যাত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে এই রুটে ফেরি ছিল ১৮ থেকে ২১টি পর্যন্ত। কিন্তু ঘাটে এখন সচল রয়েছে সাতটি ফেরি। এই রুটে আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে যুক্ত হবে মেরামতে যাওয়া ফেরি বেগম রোকেয়া ও ফরিদপুর। এমন পরিস্থিতিতে এবার ঈদে বাড়তি যানবাহনের চাপে চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছে এই পথে যাতায়াতকারীরা। তাই ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। এসব তথ্য দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের সহ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, এই রুটে এখন সাতটি ফেরি চলছে। বহরে আরও দুটি ফেরি যুক্ত হতে যাচ্ছে। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এই রুট দিয়ে শুধু হালকা গাড়ি পারাপার করা হবে। ভারী যান ও পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বিকল্প পথে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এবার ঈদে ৮৭টি লঞ্চ ও ১৫৩ স্পীডবোটও যাত্রী পারাপার করবে। তিনি আরও বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় ঘাটে যাত্রী ও ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেন, যাত্রীদের নির্বিঘেœ পারাপারে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে সোমবার ভোর থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ আরও বাড়তে থাকে। ঘাটে পারাপারে অপেক্ষায় ব্যক্তিগত যানের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। শিমুলিয়া ঘাটে সাতটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে ফেরি সঙ্কটের কারণে লঞ্চ ও ¯পীডবোটে যাতায়াত বেশি করছেন যাত্রীরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসির) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, সোমবার সকাল থেকে এ নৌ-রুটে থেকে কর্ণফুলী নামে ছোট ফেরি, সুফিয়া কামাল, কুমিল্লা, ক্যামিলিয়া ও কুঞ্জলতা নামে চারটি মিডিয়াম ফেরি এবং রায়পুরা ও রাণীগঞ্জ নামে দুটি ডা¤প ফেরিসহ সর্বমোট সাতটি ফেরি চলাচল করছে। সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের বেশ কিছুটা চাপ রয়েছে। শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক যানবাহন।