
ছবি: সংগৃহীত
১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জেমস ক্যামেরন পরিচালিত ‘টাইটানিক’ বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। প্রেম, বিচ্ছেদ এবং মর্মান্তিক পরিণতির এই চলচ্চিত্রটি আজও দর্শকদের হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে। সিনেমার শেষ দৃশ্যে জ্যাক ডসন নামের প্রধান চরিত্রটির (লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও অভিনীত) মৃত্যু নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা চলে আসছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সত্যিই কি জ্যাককে বাঁচানো সম্ভব ছিল না?
সিনেমার শেষ দিকে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া টাইটানিকের পর জ্যাক ও রোজ (কেট উইন্সলেট অভিনীত) একটি ভাসমান কাঠের টুকরোর ওপর আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। রোজ কাঠের ওপর উঠতে পারলেও জ্যাক হিমশীতল পানিতে থেকে যান এবং শেষ পর্যন্ত মারা যান।
এই দৃশ্যটি দেখার পর বিশ্বজুড়ে বহু দর্শক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তবে একইসাথে অনেকেই মনে করেন, যদি রোজের জন্য ঐ কাঠের টুকরায় জায়গা হয়ে থাকে, তবে জ্যাকের জন্যও নিশ্চয়ই কিছু জায়গা ছিল। দুজনের একসাথে ঐ ভাসমান বস্তুতে আশ্রয় নেওয়া কি আদৌ অসম্ভব ছিল?
পরিচালক জেমস ক্যামেরন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে জ্যাকের মৃত্যু চিত্রনাট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে ত্যাগ অপরিহার্য ছিল এবং জ্যাকের মৃত্যু না দেখালে সিনেমার আবেগ ও মূল বার্তা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। ক্যামেরনের মতে, দুজনে একসাথে কাঠের টুকরোর ওপর থাকলে সেটি ডুবে যেত, যা বাস্তবসম্মত ছিল না।
তবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকসহ কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা এই যুক্তির বিরোধিতা করে। তারা বাস্তব পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করেছে যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখলে জ্যাক ও রোজ উভয়েই ঐ কাঠের টুকরোর ওপর টিকে থাকতে পারতেন এবং তাদের জীবন রক্ষা করা যেত। এই কারণে বিতর্ক আজও বিদ্যমান।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তার নিরিখে ‘টাইটানিক’ কেবল একটি প্রেমের কাহিনি নয়। এটি ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া আসল টাইটানিক জাহাজের মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। ক্যামেরনের গভীর গবেষণা, চমৎকার নির্মাণশৈলী, হৃদয়স্পর্শী চিত্রনাট্য এবং জেমস হর্নারের সুর করা ‘My Heart Will Go On’ গান সিনেমাটিকে এক কিংবদন্তী status দিয়েছে।
মুক্তির পর সিনেমাটি বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য অর্জন করে এবং ১১টি বিভাগে অস্কার পুরস্কার জেতে, যার মধ্যে সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালকও অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ বারো বছর ধরে এটি বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের স্থান ধরে রেখেছিল।
জ্যাক ও রোজের প্রেম শুধু সিনেমার পর্দাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি সংস্কৃতিতেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এই জুটি ভালোবাসার এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। জ্যাকের আত্মত্যাগ ভালোবাসার চরম দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হয়, এবং রোজের বেঁচে থাকা সেই ভালোবাসার স্মৃতি বহন করে চলে।
সত্যি বলতে, ‘টাইটানিক’-এর শেষ দৃশ্যটি নিয়ে বিতর্ক এবং আবেগ সম্ভবত কখনোই শেষ হবে না। পরিচালক হয়তো বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই জ্যাকের মৃত্যু দেখিয়েছেন, কিন্তু দর্শকরা আজও মনে মনে প্রশ্ন করেন—একটু চেষ্টা করলেই কি তাকে বাঁচানো যেত না?
মুমু