
ছবি :সংগৃহীত
সাধারণত গ্রামাঞ্চলে অনেকেই সান্ডা ও গুইসাপকে একই প্রাণী মনে করে থাকেন। দেখতে কিছুটা মিল থাকলেও বাস্তবে এদের মধ্যে রয়েছে গঠনগত, আচরণগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।
বিজ্ঞানসম্মতভাবে উভয়েই Varanus গোত্রের সদস্য হলেও, সান্ডা এবং গুইসাপ ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এদের বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস ও স্বভাবের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট পার্থক্য।
সান্ডা: মরুভূমির বাসিন্দা, তৃণভোজী ও শান্ত স্বভাবের
সান্ডা একটি টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ, যার আদি নিবাস আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চল। দেখতে গুইসাপের মতো হলেও সান্ডার দেহ তুলনামূলক ছোট এবং লেজ মোটা ও খাঁজযুক্ত। এই লেজ সে আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
সাধারণত সান্ডা তৃণভোজী প্রাণী, তবে মাঝে মাঝে পোকামাকড় বা ছোট টিকটিকিও খায়। দিনের বেলা রোদ পোহানো এবং রাতে মাটির গর্তে আশ্রয় নেওয়া এদের স্বাভাবিক জীবনধারা। এটি বিষাক্ত নয় এবং সাপ জাতীয় প্রাণী নয়।
বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের কিছু বেদুইন সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবে সান্ডার মাংস খেয়ে থাকে। যদিও সামাজিক মাধ্যমে এটি এখন হাস্যরসের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গুইসাপ: জলকেন্দ্রিক, মাংসাশী ও আক্রমণাত্মক
গুইসাপ একটি উভচর প্রাণী, যাকে সাধারণত পুকুর, নদী বা জলাশয়ের আশপাশে দেখা যায়। এরা মাংসাশী এবং অনেক সময় মৃত প্রাণী খেয়ে থাকে। আচরণে এটি অনেকটা কুমিরের মতো—গোপনে শিকার করে এবং প্রয়োজনে দ্রুতগতিতে আক্রমণ করতে পারে।
গুইসাপকে অনেক সময় বিষাক্তও বলা হয়ে থাকে, যদিও এ বিষ মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে মানুষের আশেপাশে থাকলে আতঙ্কের কারণও হতে পারে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ: কে হালাল, কে হারাম?
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সান্ডা খাওয়া নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও, এটি সম্পূর্ণ হারাম নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সান্ডা খাননি, তবে যারা খেয়েছেন—তাদের নিষেধ করেননি। ফলে হানাফি মাজহাব অনুসারে সান্ডা খাওয়া মাকরূহ বা অপছন্দনীয় হলেও সরাসরি হারাম নয়।
অন্যদিকে, গুইসাপ খাওয়া ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। এর খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত আচরণ এবং হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এটি হারাম প্রাণী হিসেবে গণ্য হয়।
সা/ই