
ছবি: প্রতীকী
বিদ্যুৎ এখন কেবল আলোর সংস্থান নয়, এটি পরিণত হয়েছে এক কৌশলগত শক্তিতে—একটি জাতীয় মর্যাদার প্রতীকে। অথচ এই অবস্থানে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে পার করতে হয়েছে দীর্ঘ এক অন্ধকার যুগ, যেখানে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আর সেই বিদ্যুৎ খাতই একসময় রূপ নিয়েছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও বহুজাতিক লুটপাটের মাঠে।
পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান তোলা হলেও বাস্তবে বিদ্যুৎ খাতে চলছিল ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা ও ভাড়াভিত্তিক চুক্তির এক অদৃশ্য দাসত্ব। ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বিদ্যুৎ কখনো থেমে যেত, কখনো হঠাৎ দাম বেড়ে যেত।
ভারতীয় কোম্পানি এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর যৌথ অংশীদারিত্বে তৈরি হয়েছিল ‘কুইক রেন্টাল মাফিয়া’। প্রকল্প ছিল, বিদ্যুৎ ছিল না। অথচ কোটি কোটি টাকা বিদেশে চলে যেত ‘ভাড়া বিদ্যুৎ’-এর নামে।
২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ক্ষমতায় আসেন অর্থনীতিবিদ ও শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নীরবে, ধাপে ধাপে শুরু হয় বিদ্যুৎ খাতে এক বৈপ্লবিক রূপান্তর।
প্রথম পদক্ষেপ ছিল কুইক রেন্টাল চুক্তির নবায়ন বন্ধ। এরপর দেশীয় গ্যাস ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জোর দেওয়া হয়। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ির মত প্রকল্পে বিদেশি আধিপত্য সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ফলাফল আজ বাংলাদেশ নিজের বিদ্যুৎ চাহিদার ৯৫% এর বেশি নিজেই উৎপাদন করছে। ভারতের রপ্তানি নির্ভরতা যেখানে একসময় ছিল ২০ শতাংশের বেশি, এখন তা নেমে এসেছে ৭-৮ শতাংশে।
সীমান্তবর্তী কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো এলাকায় যেখানে একসময় ভারতীয় বিদ্যুতের গ্রিড প্রবাহিত হতো, এখন সেখানে দেশের নিজস্ব গ্রিড জ্বলছে। বর্তমানে ৯৭% গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ।
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ইতোমধ্যেই ৭০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা ২০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।
এই রূপান্তরের পেছনে যেমন রয়েছে কৌশলগত নেতৃত্ব, তেমনি শুরু হয়েছে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধ। ভারতের তিনটি বড় বিদ্যুৎ কোম্পানি হঠাৎ ঢাকার সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসেছে। অফার দিচ্ছে কম দামে বেশি সরবরাহের। বিদ্যুৎ নিয়ে বাংলাদেশের বিজয় হলেও ভূরাজনৈতিক চক্রান্ত এখনো থেমে নেই।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=c-KgFMzrcPA
রাকিব