
ছবি: প্রতীকী
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক টেবিলে ভেসে উঠেছে নতুন এক বার্তা, যার প্রতিধ্বনি যেন ঢাকাতেও জোরালোভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বহু বছরের প্রতীক্ষা ও অনিশ্চয়তার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধুমাত্র একটি আলোচনার সূচনা নয়, বরং বাংলাদেশের রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য হতে পারে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের আগে পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। তবে, এতে দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গড়ে ১৫.৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে, যখন তার প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে। যদিও ঢাকার অনুরোধে বর্তমানে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে (USTR) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়। বৈঠকে বাণিজ্য সচিবসহ প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়ে বাংলাদেশের কাছে চুক্তির একটি খসড়া পাঠানোর অনুরোধ করেছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ এবং তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ওভেন পোশাকের প্রায় ২৬ শতাংশ, নিটওয়্যারের ১১.৭১ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইল পণ্যের ১৬.১২ শতাংশই রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
তবে বর্তমান শুল্ক কাঠামোতে বড় ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, সেখানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যে গড় শুল্ক আরোপ করে মাত্র ৬.১ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশের সর্বাধিক আমদানি করা পণ্য কাঁচা তোলা ও স্ক্র্যাপ লোহায় যথাক্রমে ০ ও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি কার্যকর হলে তা কেবল বাণিজ্যিক সুবিধাই নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কেও এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=uKFOFTQJwVs
রাকিব