
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আদিপৈত গোয়ালপাড়া এলাকার যুবক সোহেল (৩০)। বাবা আক্কাস আলী একজন দিনমজুর। খাটেন স্থানীয় একটি করাতকলে। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসায় ডাক্তার-কবিরাজের পেছনে সর্বস্ব খুইয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। উন্নত চিকিৎসা দিতে না পেরে ছেলের পায়ে শিকল পরিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
লোহার শিকলে তালা আটকানো পা একটা। গোসল, খাওয়া এমনকি প্রাকৃতিক কাজও সারতে হয় শিকল পরে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এমন শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন সোহেল।
জানা যায়, ২০০৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় সোহেলের ছোট ভাই রুবেলের মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে বাঁশের খুঁটিতে বিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয়দের ধারণা, কে বা কারা রুবেলকে হত্যা করে সেখানে রেখে গিয়েছিল, যা আজও অজানা। এই ঘটনার পর থেকেই সোহেলের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় এবং কথাবার্তায় অসংলগ্নতা বাড়তে থাকে। পরিবার অথবা পরিবারের বাইরের কাউকেই সে চিনতে পারে না। হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে। শিশু-বৃদ্ধ যাকে কাছে পায়, তাকেই মেরে রক্তাক্ত করে। পরিবারের লোকজন তাকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও টাকার অভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না তারা। ফলে কিছুদিন পর পাগলামি আরও বেড়ে যায়। তারা নিরুপায় হয়ে এক যুগ ধরে সোহেলকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পাশে রাস্তায় একটি আমগাছের গোড়ায় সোহেলের ডান পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে খুবই শান্ত, আবার মাঝে মাঝে হঠাৎ রেগে যাচ্ছে সে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাচ্চাদের খামচি দেওয়ার চেষ্টা করছে। মা এসে খাবার দিলে থালা উল্টে ফেলে দিচ্ছে। আবার মাটি থেকে সেই খাবার নিজেই তুলে খাচ্ছে।
সোহেলের বাবা আক্কাস আলী বলেন, ‘ডাক্তার-কবিরাজ দেখাতে দেখাতে টাকাপয়সা সব শেষ। করাতকলে দিনমজুরি করে যা পাই, তা দিয়ে তিন বেলা খাবারই জোটে না, ছেলের ওষুধ কিনব কীভাবে?’
সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মা হয়ে ছেলের এত কষ্টের জীবন সইতেও পারি না, কিছু করতেও পারি না। চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগে। এত টাকা কই পাব? সরকার যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, আমার বাবাটা হয়তো সুস্থ হয়ে যেত।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম আলমগীর জনকন্ঠকে বলেন, হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধী হিসেবে এখন থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা হবে। আর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হবে।