
ছবি : সংগৃহীত
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। নতুন জনসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর ভারতের কর্তৃত্ববাদী আচরণের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে। এর জের ধরেই দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত হিমশীতল অবস্থায় পৌঁছেছে।
সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শনিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ (গার্মেন্টস পণ্য) কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের আমদানি নির্দিষ্ট সীমান্ত পয়েন্টে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশি তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল মহারাষ্ট্রের নাভা সেবা এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। স্থলবন্দর কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশ নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্য, প্লাস্টিক ও কাঠের আসবাবপত্রের আমদানিও সীমিত করা হয়েছে।
ভারতের এই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিজ দেশের ব্যবসায়ী, ট্রাক চালক ও বন্দরের শ্রমিকরা। *ফুলবাড়ি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শুভঙ্কর নস্কর* জানান, ফুলবাড়ি দিয়ে যেসব বাংলাদেশি পণ্য আসত, তা বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস ছিল। একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন *ফুলবাড়ি ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমান*। তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা বন্দরের শ্রমজীবী মানুষদের জীবিকায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) জানায়, ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য* ক্ষতির মুখে পড়বে। যা বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দর বাণিজ্যের প্রায় ৪২ শতাংশ।
GTRI-এর মতে, বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে দেওয়া বক্তব্য—এই দুটিকে কেন্দ্র করেই ভারত এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এ সংকট বাণিজ্যের বাইরে আরও বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষদের ওপর এর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি।
আঁখি