ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শান্তির দূত কে হবেন, পুতিন নাকি ট্রাম্প?

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:১৮, ১৯ মে ২০২৫

শান্তির দূত কে হবেন, পুতিন নাকি ট্রাম্প?

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার (১৯ মে) কথা বলবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় নেতারা ইতোমধ্যেই মস্কোর কাছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছিলেন পুতিন, যার ফলে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

শান্তিকামী হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে আগ্রহী ট্রাম্প বারবার ইউক্রেনের “রক্তস্নান” বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। তার প্রশাসন ইউক্রেন সংঘাতকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একটি প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ট্রাম্পের চাপের মুখে পুতিনের প্রস্তাবনায় এবং ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির দাবির প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মার্চ ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা তুরস্কের ইস্তানবুলে সরাসরি বৈঠক করেন।

নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, “আজকের ফোনালাপের বিষয় হবে এই ভয়াবহ ‘রক্তস্নান’ বন্ধ করা, যাতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫,০০০ রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনা প্রাণ হারাচ্ছেন, এবং পাশাপাশি বাণিজ্য। আশাকরি আজ একটি ফলপ্রসূ দিন হবে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং এই সহিংস যুদ্ধ, যা কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না, তা শেষ হবে।”

ট্রাম্প বলেন, তিনি এবং পুতিন একত্রে বসা পর্যন্ত শান্তি আলোচনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তিনি আজ (ইস্টার্ন টাইম  ১৪০০ জিএমটি) পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ফোনালাপের প্রস্তুতি চলছে।

রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় গুরুত্ব না দিলে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলে ট্রাম্প প্রশাসন সতর্ক করেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ন্যাটোর বিভিন্ন নেতার সঙ্গেও আলোচনা করবেন।

এদিকে পুতিন, যার সেনাবাহিনী বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আগ্রসর হচ্ছে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য এখনো তার পূর্বশর্তে অনড় রয়েছেন।

রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, রাশিয়া রবিবার একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরিকল্পনা করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে, যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের জুনে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রাশিয়ার দাবিকৃত চারটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

রবিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক্স-এ এক বার্তায় বলেন, “আগামীকাল প্রেসিডেন্ট পুতিনকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি শান্তি চান- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ও ইউক্রেন ও ইউরোপের সমর্থিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করে।”

পুতিন যুদ্ধবিরতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ থামানো যাবে না যতক্ষণ না একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পরিষ্কার হয় বা সমাধান হয়।

ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন, পুতিন প্রকৃত অর্থে শান্তিতে আগ্রহী নন, বরং ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি এমন একটি চুক্তি করে নিতে পারেন যা ইউক্রেনকে তার এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড হারিয়ে দিতে বাধ্য করবে এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থেকেও বঞ্চিত করবে।

পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইউরোপীয় নেতারা এবং ইউক্রেন রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন এবং রুশ সেনাদের পরাজয়ের অঙ্গীকার করেছেন। রাশিয়া এই দাবিকে অস্বীকার করে বলেছে, এটি পশ্চিমাদের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া।

পুতিন এই যুদ্ধকে রাশিয়ার জন্য একটি মোড় পরিবর্তনের সময় হিসেবে দেখছেন- যেখানে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপমান করেছে বলে তিনি দাবি করেন। ইউক্রেনসহ রাশিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণকেই তিনি এই সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেন।

সূত্র: https://shorturl.at/jRH7d

মিরাজ খান

×