
ছবিঃ সংগৃহীত
অনেকেই এক কাপ কফি খেয়ে নিজেকে মুহূর্তেই চাঙ্গা অনুভব করেন। আবার কেউ কেউ বলেন, কফি খেলেই তাদের ঘুম পায়! অথচ কফির মূল উপাদান তো একটাই—ক্যাফেইন। তাহলে একই ক্যাফেইন কারো শরীরে উদ্যম জোগায়, আবার কারো ঘুম বাড়িয়ে দেয়—এর পেছনে আছে বিজ্ঞান।
ক্যাফেইনের কাজ কীভাবে হয়?
ক্যাফেইন মস্তিষ্কে ঢুকে এক বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, যার নাম অ্যাডেনোসিন (Adenosine)। সারাদিনের পরিশ্রমে শরীরে অ্যাডেনোসিন জমতে থাকে এবং এই রাসায়নিকটি আমাদের ক্লান্ত বোধ করায়, ঘুমের সংকেত দেয়। অর্থাৎ, অ্যাডেনোসিন হচ্ছে ঘুমের প্রাকৃতিক দূত।
ক্যাফেইনের গঠন অ্যাডেনোসিনের মতো হওয়ায়, এটি মস্তিষ্কে গিয়ে অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরের জায়গা দখল করে নেয়। ফলে ঘুমের সংকেত বন্ধ হয়ে যায় এবং আমরা নিজেকে উদ্যমী, সতেজ ও মনোযোগী অনুভব করি। এই কারণেই ক্যাফেইনকে অনেক সময় নিউরোবুস্টার বলা হয়।
তাহলে সবাই একভাবে প্রতিক্রিয়া করে না কেন?
এর পেছনে রয়েছে জিনগত পার্থক্য। আমাদের লিভারে একধরনের এনজাইম কাজ করে ক্যাফেইন ভেঙে ফেলার জন্য। কারও শরীরে এই এনজাইম বেশি সক্রিয়, ফলে তারা দ্রুত ক্যাফেইন প্রসেস করতে পারে—তারা কফি খেয়েই দ্রুত চাঙ্গা হন। অন্যদিকে, যাদের এনজাইম ধীরগতিতে কাজ করে, তাদের শরীরে ক্যাফেইনের প্রভাবও ধীরে দেখা দেয় বা অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
মস্তিষ্কে অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরের সংখ্যাতেও ভিন্নতা থাকে। যাদের রিসেপ্টর বেশি সংবেদনশীল, তারা ক্যাফেইনের উপস্থিতিতেও ঘুমের সংকেত পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে না। এতে শরীরে তৈরি হয় বিভ্রান্তি—জাগবো নাকি ঘুমাবো? এই ‘নিউরোকনফিউশন’ অনেক সময় ঝিমুনির কারণ হয়।
ক্লান্ত শরীরে উল্টো প্রভাব
যদি আপনি অতিমাত্রায় ক্লান্ত হন, ঘুমের ঘাটতি থাকে বা মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে কফির বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। শরীর তখন পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে চায়। ক্যাফেইন সেই সংকেত আটকে দিলে মস্তিষ্ক “শাটডাউন” মোডে চলে যেতে পারে—ফলে ঘুম, মাথাব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দেয়।
খালি পেটে কফি? সাবধান!
অনেকে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে কফি খান। এতে ক্যাফেইন রক্তে হঠাৎ ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে যায়। এর ফলাফল হতে পারে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা বা ঘুম ঘুম ভাব।
ক্যাফেইন টলারেন্স বা সহনশীলতা
যারা নিয়মিত কফি খান, তারা ধীরে ধীরে শরীরকে ক্যাফেইনের প্রতি সহনশীল করে ফেলেন। তখন একই পরিমাণ কফিতে আগের মতো চাঙ্গাভাব পাওয়া যায় না। বরং মাত্রা বাড়াতে গিয়ে শরীরের ওপর চাপ পড়ে, যা উল্টো ক্লান্তির কারণ হয়।
কফি খেয়ে ঘুম? হ্যাঁ, এটা হতে পারে শক্তিশালী কৌশল!
একটি মজার কিন্তু কার্যকর কৌশলের নাম কফি ন্যাপ—এক কাপ কফি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ১৫–২০ মিনিটের ছোট ঘুম। এটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও গবেষণায় প্রমাণিত, এইভাবে ক্যাফেইনের কার্যকারিতা আরও বাড়ে। কারণ, ক্যাফেইন কাজ করতে সময় নেয় ২০ মিনিট মতো, আর এই সময় আপনি ঘুমিয়ে পড়লে কিছুটা অ্যাডেনোসিন কমে যায়। ফলে ঘুম ভেঙে গেলে ক্যাফেইন পুরো শক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে, আপনাকে করে তোলে দ্বিগুণ সতেজ।
কফি কীভাবে আপনার শরীরে কাজ করবে, তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক গঠন, জিন, ঘুমের অভ্যাস এবং মানসিক অবস্থার ওপর। তাই কফির প্রতিক্রিয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি একেকজনের জন্য একেক রকম হতেই পারে।
মারিয়া