ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যাক পেইন মানেই পেশির সমস্যা? না! লুকিয়ে থাকতে পারে লিভার, কিডনি বা ফুসফুসের বিপদ!

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:১২, ১৯ মে ২০২৫

ব্যাক পেইন মানেই পেশির সমস্যা? না! লুকিয়ে থাকতে পারে লিভার, কিডনি বা ফুসফুসের বিপদ!

আমরা প্রায়ই ব্যাক পেইনকে সাধারণ শারীরিক ক্লান্তি বা মাংসপেশির টান বলে মনে করি। কিন্তু অনেক সময় এই ব্যথা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে কিডনি, লিভার কিংবা ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিলে তা ব্যাক পেইনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ব্যথার ধরন, অবস্থান ও এর সঙ্গে থাকা উপসর্গ,যেমন জ্বর, শ্বাসকষ্ট বা চোখ-মুখ হলদে হয়ে যাওয়া এসব দেখে সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব। চলুন জেনে নিই এমন ৬ ধরনের ব্যাক পেইন সম্পর্কে, যা হতে পারে শরীরের ভেতরের কোনো রোগের পূর্বাভাস।

১. কাশলে ব্যাক পেইন?
কাশি, হাঁচি কিংবা গভীর শ্বাস নিলে ব্যাক পেইন বেড়ে গেলে তা হতে পারে ফুসফুস বা কিডনির সংক্রমণ বা প্রদাহের লক্ষণ। নিউমোনিয়া বা প্লুরিসি হলে ফুসফুসের আবরণীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে পিঠে তীব্র ব্যথা তৈরি হতে পারে। আবার কিডনিতে সংক্রমণ বা পাথর থাকলে কাশির সময় পিঠে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে যদি জ্বর, শ্বাসকষ্ট কিংবা প্রস্রাবের সমস্যাও থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. কোমরের নিচে ব্যাক পেইন?
কোমরের নিচের দিকে, বিশেষ করে পাঁজরের কাছাকাছি একপাশে বা দু’পাশে ব্যথা অনুভব করলে তা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। কিডনির সংক্রমণ কিংবা পাথরের কারণে সাধারণত এমন ব্যাক পেইন হয়। এই ব্যথা তলপেট বা উরু পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি ঘন ঘন প্রস্রাব, জ্বালাভাব, প্রস্রাবে রক্ত বা জ্বর থাকলে বিষয়টি আর অবহেলার নয়। পেশিজনিত ব্যাক পেইনের মতো বিশ্রামে উপশম হয় না এই ব্যথা।

৩. ফ্ল্যাঙ্ক পেইন: পাশে ব্যাক পেইন?
পেটের উপরের অংশ ও পিঠের মাঝামাঝি জায়গায়, শরীরের এক বা দু’পাশে যদি ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে তাকে ফ্ল্যাঙ্ক পেইন বলা হয়। কিডনির পাথর, সংক্রমণ (যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস) বা বাধা থাকলে এমন ব্যথা হয়। ব্যথাটি তলপেট বা কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে জ্বর, ঠান্ডা লাগা, বমি, প্রস্রাবের পরিমাণ বা রঙের পরিবর্তন থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

৪. ডান দিকের ওপরের পিঠে ব্যাক পেইন?
ডান কাঁধের নিচে বা পিঠের ওপরের ডান পাশে ব্যাক পেইন হলে তা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার, টিউমার বা লিভার ফোলাভাবের কারণে এমন ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত মৃদু কিন্তু স্থায়ী হয় এবং এর সঙ্গে ক্লান্তি, বমিভাব, চোখ-মুখ হলুদ হয়ে যাওয়া ও পেটের ওপরের অংশ ভারী অনুভব হতে পারে।

৫. পিঠের মাঝামাঝি বা কাঁধের নিচে ব্যাক পেইন?
মিড-টু-আপার ব্যাক পেইন, বিশেষ করে কাঁধের নিচে বা পিঠের মাঝামাঝি হলে তা ফুসফুসের রোগের লক্ষণ হতে পারে। নিউমোনিয়া, প্লুরিসি, পালমোনারি এম্বোলিজম বা এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারের কারণেও এই ব্যথা হতে পারে। এর সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা রক্তসহ কাশি থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

৬. কাঁধে ছড়ানো ব্যাক পেইন?
অনেক সময় ব্যথা শরীরের মূল উৎস থেকে দূরে অনুভূত হয়—এমন ব্যথাকে বলা হয় রেফার্ড পেইন। যেমন, ডান কাঁধে ব্যথা লিভার বা গলব্লাডারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। আবার বাম কাঁধে ব্যথা হলে তা হতে পারে ফুসফুস বা ডায়াফ্রামের সমস্যা। এই ব্যথা সাধারণত কাঁধে সরাসরি কোনো আঘাত ছাড়াই হয়, এবং অঙ্গের প্রদাহজনিত স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।


প্রতিদিনের ব্যাক পেইনকে যদি আমরা শুধুই শারীরিক চাপ বা ভুল বসার ভঙ্গির ফল ভাবি, তবে বড় ভুল করছি। ব্যাক পেইন হতে পারে শরীরের গভীরে লুকিয়ে থাকা গুরুতর অসুখের একটি প্রাথমিক সংকেত। ব্যথার ধরন, অবস্থান ও সংযুক্ত উপসর্গ দেখে সচেতন হওয়া এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। তাই ব্যাক পেইনকে অবহেলা নয়, বরং বুঝে শুনে ব্যবস্থা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2udsryaw

আফরোজা

×